বড় সংকটে পুঁজিবাজার, স্থিতিশীলতায় দরকার আরও দু’টি আইসিবির

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 02:44:47

তার‌ল্য ও আস্থা সংকটে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর ভয় দূর করা। এবং দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে স্থতিশীল রাখতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মতো আরও দু’টি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। এমনটাই মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, নানা কারণে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় থাকেন। আর তাতে বাজারে দরপতন লেগেই থাকে। এ দরপতন ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইসিবি’র একার পক্ষে সম্ভব না। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ মার্কেট সার্পোট ফান্ডের জন্য আরও দু’টি প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরি।

সম্প্রতি ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসিসোয়েশন (ডিবিএ) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে এরকম একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। ডিএসইর এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ডিএসইর শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউজের সদস্যরাও।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, পুঁজিবাজারে এখন দু’টি সমস্যা রয়েছে। এর একটি হলো- বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা। আরেকটি হলো তারল্য সংকট।

এ দু’টি দূর করে শক্তিশালী স্থিতিশীল একটি পুঁজিবাজার গঠন করতে হলে প্রথমে দুর্বল কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইপিওর নীতিমালা সংস্কার করতে হবে। প্রি আইপিওতে আসার আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার কতটুকু থাকবে তা নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির বিষয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানিসহ ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়তে শুরু করবে।

অন্যদিকে তারল্য সংকট দূর করতে আইবিসির মত আরও দু’টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিনিয়োগ ব্যাংক গঠন করা। কারণ সেডেকন্ডারি মার্কেটে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। আর তাতে দরপতন লেগেই থাকে। এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ ব্যাংক দরকার।

ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের খুবই অভাব রয়েছে। পলিসিগত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বিদেশি ও সরকারি ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না।

আর এ সুযোগে দুর্বল ও খারাপ কোম্পানির একের পর এক তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তালিকাভুক্তির কিছুদিন পর কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং প্লোসমেন্টধারীরা ফলে শেয়ারে দাম বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার তুলনায় খারাপ কোম্পানি বাজারে বেশি আসছে। তাতে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট বৃদ্ধি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় রয়েছে। তারাও সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতই আচরণ করছেন। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে না। তারল্য সংকট চলছে।

তার কথার সঙ্গে একমত পোষণে করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমান সংকট দূর করতে বাজারে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন নতুন ফান্ড। পাশাপাশি দরকার ভাল কোম্পানির তালিকাভুক্তি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর‌্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এরপর থেকে অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৪১ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে বেশিরভাগ দিন দরপতন হয়েছে। তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ মূলধন নেই হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে ডিএসই থেকে পুঁজি নেই হয়েছে ৭ হাজার ৯৫৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। সিএসই থেকে নেই হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৯কোটি ২০ লাখ ২ হাজার টাকা। আর ডিএসইর সূচক কমেছে ৪৩৩ পয়েন্ট। লেনদেন হাজার কোটি টাকার গড় থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর