অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক ইতিবাচক

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 09:56:36

বর্তমানে দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। তবে সার্বিক অর্থনীতি চাঙা করতে ও নেতিবাচক সূচক ইতিবাচক করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে একাধিক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোর মধ্যে রফতানি আয় বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী, আমদানি ব্যয় কমেছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে, শিল্প ঋণে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্রের হার কমেছে এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বিপরীতে ব্যাংকিং খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ কমেছে, আমানত সংগ্রহে মন্দা, সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ও বেসরকারি খাতে কমেছে, গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ও কৃষিঋণ বিতরণে মন্দা, রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির হার ও বৈদেশিক অনুদান কমেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) প্রথম ছয় মাসে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, আর চলতি অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯) বেড়েছে ৪ দশমিক ০২ শতাংশ। গত অর্থবছরে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছিল ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, তবে চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছিল ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, আর চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

দেশের বর্তমান অর্থনীতির বিষয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতি গতানুগতিক ধারায় চলছে। এ ধারায় চললে অর্থনীতিতে দ্রুত বড় কোনো অগ্রগতি হবে না। এখন বড় অস্থির কারণ বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও ব্যাংক ঋণের স্বল্পতা।’

তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বছরই জিডিপি বাড়ছে। এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না। ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। এখন আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূর করার দিকে নজর দিতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশই বেসরকারি খাতের। এ কারণে বেসরকারি খাত চাঙা হলে অর্থনীতির গতি ও কর্মসংস্থান বাড়ে। তাই এ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো উচিত।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয় ২৯ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে নিয়েছে ৩০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমানত প্রবাহ বেড়েছিল সাড়ে ৫ শতাংশ, আর চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আর চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি বাড়ায় ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বিরাজ করছে। এ সংকট দূর করতে হয় আমানত বাড়াতে হবে, নয় ঋণের লাগাম টানতে হবে। ব্যাংকগুলোকে এখন বকেয়া ঋণ আদায় বাড়িয়ে ও ব্যয় কমিয়ে সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোতে তারল্য আছে ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক লাখ ৭৮ হাজার কোটি ও ব্যাংকগুলোর কাছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে কৃষি খাতে ঋণ প্রবাহ ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বাড়লেও চলতি অর্থবছরে কমেছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ঋণ প্রবাহ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়লেও চলতি অর্থবছরে কমেছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্প খাতে মেয়াদী ঋণ প্রবাহ ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও চলতি অর্থবছরে ২১ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

এছাড়া গত ২৭ মার্চ রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৩৫ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ১৬৫ কোটি ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বেড়ে ৮২ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে ৮৪ টাকা ২৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় বাড়ে ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ ও চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে আমদানির জন্য এলসি খোলা বেড়েছিল ৬৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে কমেছে ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এলসি নিষ্পত্তির হার বেড়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে রফতানি আয় বেড়েছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বৈদেশিক অনুদান বেড়েছিল ১২০ দশমিক ০৪ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল ৮২ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে এসেছে ৯১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২১ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছরে এসেছে ৭ কোটি ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৪০ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩৪ কোটি ডলার। মূলত আমদানি ব্যয় কমায় এ ঘাটতির পরিমাণ কমেছে। এদিকে গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রাজস্ব আয় বেড়েছিল ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে বেড়েছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর