অর্থ বিভাগের অনুমতি ছাড়াই প্রকল্পের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হবে

বিবিধ, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:11:18

দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় করতে প্রকল্প পরিচালকদের এখন থেকে অর্থ বিভাগ ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের কোনো অনুমতি লাগবে না। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি সংশোধনী বাজেট আদেশে এ অনুমতি না লাগার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই নির্দেশের পর থেকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বলে কিছু থাকল না। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কিভাবে আগের তিন কিস্তির অর্থ ব্যয় হয়েছে তা জানাতে বলা হয়, এখন আর সেটা রইল না।

তবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসতে না হলেও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো প্রকল্পের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে।

জানা যায়, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয় চারটি কিস্তিতে। যার জন্য অর্থ বিভাগ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধতা ছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, প্রকল্প ব্যয়ের ক্ষেত্রে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

কিন্তু প্রকল্পের কাজে গতি আনার জন্য চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি)। আর তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হতো।

কিন্তু এতেও প্রকল্পের কাজে ধীরগতি কাটছে না এবং নানা ধরণের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে পিডিদের- এমন যুক্তির ভিত্তিতে অর্থ ছাড় ও ব্যবহারের সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পিডিদের।

এই আদেশের ফলে এখন থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের কোষাগার থেকে বরাদ্দকৃত অর্থের পুরো অংশ পরিচালকরাই ছাড় করতে পারবেন। এই জন্য অর্থ-বিভাগ কিংবা প্রকল্পের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া লাগবে না।

তবে প্রকল্পের শুল্ক, ভ্যাট ও ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয়ে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা প্রকল্প পরিচালকরা ছাড় করতে পারবেন না। আর প্রকল্প সাহায্যের বর্তমান যে নিয়ম রয়েছে তা-ই বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঋণ ও অনুদান দাতা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শর্ত এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে অর্থ ছাড় হবে।

৩১ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত কর্তৃত্ব অনুযায়ী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাস্তবয়ানাধীন অনুমোদিত প্রকল্পের জিওবি অংশের বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থবিভাগ ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের কোনো সম্মতির প্রয়োজন হবে না। উক্ত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাড় হয়েছে বলে গণ্য হবে।

জানা গেছে, সাধারণত সরকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের যে পরিকল্পনা করে, তা প্রকল্প ভিত্তিক হয়ে থাকে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে একজন করে প্রকল্প পরিচালক থাকেন। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকল্পগুলোর কোন খাতে কত খরচ হবে তা অনুমোদনের সময়ই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

দরপত্র আহ্বান করে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয় মালপত্র কেনাকাটা, অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করা অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দিয়ে থাকে। এর সঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও সম্পৃক্ত। অর্থবছরকে চারটি ভাগ করে চার কিস্তিতে অর্থ ছাড় করা হয়।

এসব কেনাকাটা, বিল-ভাউচারে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অর্থবিভাগের অনুমোদনক্রমে অর্থ ছাড় করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেন প্রকল্প পরিচালক। এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই অর্থ ছাড় ও ব্যবহার করতে পারবেন প্রকল্প পরিচালকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর