ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি কেএসআরএম

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 20:12:48

রফতানির কোটায় তৈরি করা পণ্য দেশীয় বাজারে বিক্রি করে সেই পণ্য রফতানি দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে কর সুবিধা নিয়েছে রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে প্রত্যর্পণ (রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা) নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। ফাঁকি দেওয়া সমুদয় রাজস্ব পনের দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ঐ নির্দেশের পর দেড়মাস অতিবাহিত হলেও করের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি কেএসআরএম।

মূসক বিধিমালা অনুযায়ী, কেএসআরএম-এর বিরুদ্ধে দেশের বাজারে রড বিক্রির অভিযোগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট পরিচালক মোহাম্মদ সামছুর ও সরকার পক্ষের প্রতিনিধি সীতাকুণ্ড সার্কেলের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ও দালিলিকভাবে প্রতিষ্ঠিত’ হয় যে, প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডের বড়কুমিরার ঘোড়ামাড়া এলাকায় অবস্থিত মেসার্স কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডকে সমুদয় রাজস্ব পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ দেন চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট-এর সাবেক কমিশনার ও বর্তমানে এনবিআর-এর সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া।

সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকির দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঐ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য ১৫ দিনে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেনি। এখন এনবিআর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলা করার এখতিয়ার রয়েছে।‘

রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে কেএসআরএম-এর কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি।

দাবিনামার তথ্যমতে, দেশীয় বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠান রড বিক্রি করলে টনপ্রতি সরকারকে ৪৫০ টাকার মূসক দিতে হয়। যদি প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য রফতানি করে, তাহলে মূসক মওকুফ পাওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে প্রতিটনে ১৩ হাজার ৩০০ টাকা প্রত্যর্পণ সুবিধা পায়। এক্ষেত্রে কেএসআরএম দেশীয় বাজারে বিক্রি করে রফতানি সুবিধা নেওয়ায় উভয় সুবিধা পায়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট হতে ইস্যু হওয়া দাবিনামার তথ্যমতে, জুন ২০১৭ সাল হতে আগস্ট ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের ভেতরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৮০ দশমিক ৫০ টন পরিমাণ রড দেশের বাজারে বিক্রি করে তা রফতানি হিসেবে দেখিয়েছে কেএসআরএম। এতে প্রতিষ্ঠানটি মূসক ও প্রত্যর্পণ বাবদ এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৫ টাকার কর ফাঁকি দেয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কেএসআরএম রড বিক্রি বাবদ সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার বদলে উল্টো সরকার থেকে রফতানি সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৮০ দশমিক ৫০ টন রড দেশীয় বাজারে বিক্রি করে তা ‘রপ্তানি বলিয়া গণ্য’ সুবিধার অপব্যবহার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ইপিজেড এলাকায় পণ্য সরবরাহ করা হলে তা আইন অনুযায়ী ‘রফতানি বলিয়া গণ্য’ হয়। কিন্তু ইপিজেড বহির্ভূত এলাকায় পণ্য সরবরাহ করলে তা ‘রফতানি বলিয়া গণ্য’ এর আওতায় এই প্রতিষ্ঠানটি এই অনিয়ম করে। এতে একদিকে তারা যেমন মূসক ফাঁকি দেয়, তেমনি অপরদিকে রফতানি দেখিয়ে সরকার থেকে উল্টো প্রত্যর্পণ সুবিধা নেয়।’

গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান রফতানি সুবিধা নিয়ে দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর