আবারও ফুঁসে উঠছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 20:51:45

ঢাকা: পুঁজিবাজারের চলমান সংকটে আবারও ফুঁসে উঠছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালের ধসের পর আবারও রাজপথে আন্দোলনের জন্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে সক্রিয় হচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে, অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলের রাস্তায় আবারও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

সংগঠনটির নেতা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এ সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বুধবার দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।

তারা চলমান সমস্যা সমাধানের পাশপাশি পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করছেন।

আনোয়ার সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আব্দুল মান্নান বার্তা ২৪কমকে বলেন, নির্বাচনের পর বাজার ভালো হবে এমন প্রত্যাশায় নতুন করে ৫ লাখ টাকা (বিদেশ থেকে পাঠানো ছোট ভাইয়ের টাকা) বিনিয়োগ করেছি। লাভ তো দূরের কথা এখন সেই শেয়ারের দাম চলে এসেছে ৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ ২ লাখ টাকা নেই হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন দোষটা কাকে দেবো, কোথায় যাবো। ছোট ভাই জানতে চাইলে কী জবাব দেবো। আমিতো কোনো জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনিনি। তারপরও যৌক্তিকমূল্যের নিচে শেয়ার চলে এসেছে কেন? তার মতো ১৫ লাখ বিনিয়োগকারীর মধ্যে একই প্রশ্ন- বাজারের এই অবস্থা কেন?

মডার্ন সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সাইমা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও পুঁজিবাজারের দেখভালের জন্য গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব অবহেলা করে প্রধানমন্ত্রী এবং বিনিয়োগকাীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ফলে ২০১০ এর মতো আরেকটা বড় ধসের সম্মুখীন হয়েছে পুঁজিবাজার। এখনই সময় এসেছে বাজার ঠিক করার।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্পাদক মিজনুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদ ও পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার দাবিতে এখন ব্রোকার হাউজগুলোতে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা সংগঠিত হচ্ছি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমারা গত তিনদিন ধরে মতিঝিলের রাস্তায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারীদের সংগঠিত করছি। বাজার ঠিক করতে কী ধরনের প্রদক্ষেপ নেওয়া যায় তা আমরা তুলে ধরছি। সরকার ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী কর্মসূচি দেবো। বিনিয়োগকারীদের নিয়ে সমাবেশ করবো। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তথ্য মতে, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ পুঁজিবাজারে উত্থান শুরু হয়। চলে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ২৮ জানুয়ারি থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫০ কার্যদিবস লেনদনে হয়েছে। এতে ৩৪ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। আর ১৬ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে।

এসময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৬৭৭ পয়েন্ট। আর সিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার ২০৬ পয়েন্ট। ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ২শ’ কোটি টাকার গড়ে চলে এসেছে।

আর তাতে গত আড়াই মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হাওয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে ডিএসইর বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ২৬ হাজার ৯১৭ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মূলধন। অপর পুঁজিবাজার সিএসই থেকে পুঁজি হাওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৬০৮ কোটি ৩৫ লাখ ৫ হাজার টাকা।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, বিএসইসি'র সঙ্গে ডিএসই, আইিসিবি'র মিটিং হয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মিটিংয়ে যেসব দাবি তোলা হয়েছে, একটি দাবিও বাজারকে তার লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি'র চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব অবহেলা করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন। যার প্রভাবে পুরো বাজার আজ ধংসের মুখে।

বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের জন্য বিএসইসি'র প্রতি আহ্বান জানান মিজান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর