এমপিওভুক্তির বাজেটে থাকছে ১০০০ কোটি টাকা

বিবিধ, অর্থনীতি

আসিফ সওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:58:54

২০১০ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হয়েছিল। এরপর নয় বছর দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে অপ্রতুল বরাদ্দের কারণেই দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে।

তবে শিক্ষকদের জন্য আশার খবর হলো, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এমপিওভুক্তির দীর্ঘদিনের জট খুলতেই আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটেই শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দ। কিন্তু তারপরও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মাত্র একবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপর বহু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিওভুক্ত হয়নি কোনোটি। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছর আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ওই বছরের জুলাই থেকে এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া শুরু করে।

এতে দেখা গেছে, অনলাইনে প্রায় সাড়ে নয় হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৭৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বিবেচনা করেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে স্কুল ও কলেজ এক হাজার ৬২৯টি, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীনে মাদরাসা ৫৫১টি এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বাড়তি খরচ হবে এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। শিক্ষামন্ত্রণালয় এ জন্য অর্থ বরাদ্দেরও দাবি করেছে। অথচ স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তি খাতে আছে মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে এর পরিমাণ আরও অনেক কম। কিন্তু এত কম টাকায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা অসম্ভব। তাই কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি যাতে অর্থের অভাবে ঝুলে না থাকে সে জন্য আগামী অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর পরিমাণ হতে পারে প্রায়িএক হাজার কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে ৩৩২টি স্কুল এবং ২৯৯টি কলেজকে এমপিওভুক্তকরণের একটি তালিকা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে স্কুলের জন্য আগামী বাজেটে ২৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। আর কলেজের জন্য রাখা হতে পারে ৬২৭ কোটি টাকা। এছাড়া মাদরাসার জন্য বাকি অর্থ বরাদ্দ রাখা হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক সঙ্গে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও সংসদে জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৫৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশ্য চলতি বাজেটে শিক্ষায় এ বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে ২ দশমিক ০৯ শতাংশ, যা আগের বছরের সমান।

সারা দেশে বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ ২ হাজার ৩৬৫টি, মাদরাসা ৭ হাজার ৬১৮টি। এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এ ব্যয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, যে সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, সেগুলোকে এমপিও দিলে বছরে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এমপিওভুক্ত নয় এমন সাধারণ স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ৭ হাজার ১৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বছরে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর