শিথিল হচ্ছে আমদানি নীতি

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 14:12:17

রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বন্ডেড সুবিধাসহ আরো সহজ শর্ত রেখে সরকার নতুন আমদানি নীতি করতে যাচ্ছে। আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ -এর সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেলেও এখনও ২০১৮-২১ বছরের আমদানি নীতি জারি করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন আমদানি নীতি আদেশ বুধবার (২৯ মে) অর্থনৈতিক মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উঠেছিল। কমিটির বিকল্প সভাপতি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুল রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় আমদানি নীতিতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামত শোনা হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্ত্রিসভা কমিটিতে ব্যাংকের এক প্রতিনিধি মতামত দেন- আমদানির ক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট ফরম আর দরকার পড়বে না। এক সময় দেশের প্রবাসী আয় এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এলসি ফরমের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় এই এলসি রেসট্রিকশন আর রাখার দরকার নেই। আগে রিজার্ভ কম ছিল, তাই নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু শর্ত ছিল। এরপর পর্যালোচনা করে ওই প্রস্তাবটি মৌখিকভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাবটি লিখিতভাবে জানানোর পর আমদানি নীতি সংযুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এলসি খোলা হয়ে থাকে। যখন রিজার্ভ কম থাকে, তখনও এলসি খোলার প্রয়োজন হয়। এটি খুলতে অনেক ফরম পূরণ করতে হয়, যা জোগান দিতে ব্যবসায়ীদের বেশ বেগ পেতে হয়, এটা ডুয়িং বিজনেসের ক্ষেত্রে অন্তরায়। এখন রিজার্ভ ভালো। তাই এখন ফরম পূরণের জটিলতা কমিয়ে আনা হবে।

এছাড়া বৈঠকে জানানো হয়- বাংলাদেশ এখন লবণ উৎপাদন পর্যাপ্ত। কিন্তু আমদানি নীতির আওতায় সোডিয়াম ক্লোরাইড নামে সোডিয়াম সালফেট বা কস্টিক সোডাসহ কয়েকটি রাসায়নিক দ্রব্যের আনা হয়। যা বাজারে কম দামে ছেড়ে দেশীয় লবণ উৎপাদন ব্যাহত করে। বাণিজ্যিক লবণ সোডিয়াম সালফেট মানুষ খেলে নানা রোগে পড়ে যায়। এজন্য নতুন আমদানি নীতিতে দেশীয় লবন উৎপাদন বাড়াতে সোডিয়াম সালফেট বা কস্টিক সোডা আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মুক্তি বাণিজ্য অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে আমদানি নীতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প রক্ষায় নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। নতুন করে- ওষুধ, ট্যানারি ও প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শুধু গামের্ন্টস পণ্যে বন্ড সুবিধা দেওয়া হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সঙ্গে দেশীয় স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য, পণ্যের মোড়ক, পাত্র বা কনটেইনারের গায়ে উৎস দেশ (কান্ট্রি অব অরিজিন) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। খালাসের সময় উৎস দেশের সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার দেওয়া সনদ শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে শিথিল করা হচ্ছে। এলসি থাকবে, তবে ফরম থাকবে না।

আমদানি নীতি প্রতি তিন বছর পরপর নবায়ন (রিনিউ) করা হয়। দেশের অবস্থা, পণ্য এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বিবেচনা করে নতুন আদেশে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫-১৮ মেয়াদের জারি করা আমদানি নীতির ২০১৮ সালের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হয়। তবে নতুন আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আগের নীতি কার্যকর থাকে। আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৮-২০২১ অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেবেন। তারপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই নীতি কার্যকর করতে আদেশ জারি করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর