এটিএম-সিআরএম আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েস, রাজস্ব ফাঁকি

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 21:34:35

আমদানি ঋণপত্রে (এলসি বা লেটার অব ক্রেডিট) আন্ডার ইনভয়েসিং বা ক্রয়মূল্য কম দেখানোর মাধ্যমে চীন থেকে এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) ও সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) ক্রয় করার ক্ষেত্রে স্থানীয় একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারকে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া প্রকৃত ক্রয়মূল্য যা ইনভয়েসে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে বেশি, তা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবৈধ উপায়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে হুন্ডির আশ্রয় নিয়ে এটিএম ও সিআরএম রফতানিকারক দেশ চীনে পাচার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ যা দেশে প্রচলিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, জারা জামান টেকনোলজি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ব্যাংকিং খাতে এটিএম, সিডিএম, সিআরএম, আইডিএম, সিএসএম, এসটিএম ও আইডিএমসহ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রযুক্তি সরবরাহ করে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ, কাস্টমস ও আর্থিক গোয়েন্দা ইফনিট এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে পারে।

দেশীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের আমদানি ঋণপত্র (নং ১৯০১০০২৩) নথি থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জারা জামান টেকনোলজি লি. চীনের জিআরজি ব্যাংকিং ইকুইপমেন্ট (এইচ কে) কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে এ বছরের জানুয়ারি ২৮ তারিখ থেকে ২৮ এপ্রিল সময়ের মধ্যে দুটি চালানে ১৫টি সিআরএম ও ৩৫টি এটিএম আমদানি করেছে।

ঋণপএ অনুযায়ী প্রতিটি এটিএম ও সিআরএম এর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে যথাক্রমে ১১০০ ও ২৫০০ ইউএস ডলার করে। কিন্তু আমদানিকারক ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান দুটির পূর্ব যোগাযোগের রেফারেন্স লেটারে উল্লেখিত প্রোফর্মা ইনভয়েস অনুযায়ী প্রতিটি এটিএম ও সিআরএম এর প্রকৃত মূল্য যথাক্রমে ৩,৫৭০ ও ১২,৫৫০ ইউএস ডলার।

প্রকৃত মূল্য হিসেবে ১৫টি সিআরএম ও ৩৫টি এটিএম আমদানির বিপরীতে মোট পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৮২০০ ইউএস ডলার বা তিন কোটি দুই লাখ ৬৭ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ৮৪.৫০ টাকা হিসেবে)। অথচ ঋণপত্রে উল্লেখিত মূল্য হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে মোট ৭৬০০০ ইউএস ডলার বা ৬৪ লাখ ২২ হাজার টাকা।

অভিযোগ অনুযায়ী প্রকৃত আমদানি মূল্যের বাকি অংশ (২৮২,২০০ ইউএস ডলার বা ২.৩৬ কোটি টাকা) অবৈধ উপায়ে পরিশোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আমদানি ঋণপএটি আন্ডার ইনভয়েস করা না হলে পুরো আমদানি মূল্য ৩৫৮,২০০ ইউএস ডলার বা তিন কোটি দুই লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে পরিশোধ হতো, সেক্ষেত্রে সরকার কাস্টমস নীতিমালা অনুযায়ী এই আমদানি থেকে শুল্ক হিসেবে আমদানি মূল্যের প্রায় ৩৩ শতাংশ বা ১.১ কোটি টাকা পেত। কিন্তু আন্ডার ইনভয়েস হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে মূল্য পরিশোধ হয়েছে মাএ ৬৪ লাখ টাকা। আর শুল্ক হিসেবে সরকার পেয়েছে এর ৩৩ শতাংশ বা ২২.১ লাখ টাকা। এখানে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে ৭৮.৯৮ লাখ টাকা।

বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জারা জামান টেকনোলজি লিমিটেডের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে, কাস্টমস ও আর্থিক গোয়েন্দা ইফনিটে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ব্যাংকিং খাতে এটিএম, সিডিএম, সিআরএম, আইডিএম, সিএসএম, এসটিএম ও আইডিএমসহ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রযুক্তি সরবরাহ করে।

এ বিষয়ে জারা জামান টেকনোলজির কলাবাগানের (ধানমন্ডি) সুলতান টাওয়ারের তৃতীয় তলায় গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর