শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা তুলছেন বিদেশিরা

, অর্থনীতি

সেন্ট্রাল ডেস্ক ১ | 2023-08-22 08:52:34

চলতি বছরে টানা নয় মাস বিনিয়োগের পর শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা তুলে নিতে শুরু করেছেন বিদেশিরা। গত অক্টোবরে বিদেশিরা ১৫১ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। চলতি বছর বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ঘটনা এটিই প্রথম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশের শেয়ারবাজারে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত নিট বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও অক্টোবরে এসে বিদেশিদের মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রবণতা দেখা যায়। ডিএসই সূত্র জানায়, মূলত মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণেই অক্টোবরে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমেছে। গত মাসে ১৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অক্টোবর মাস শেষে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশিদের অংশগ্রহণ কমতে দেখা গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিদেশিরা মোট ৯৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। আর অক্টোবর মাসে তাদের লেনদেন নেমে এসেছে ৬৪২ কোটি টাকায়। এতে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩২ শতাংশ। চলতি বছরের অক্টোবরে বিদেশিদের শেয়ার ক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে তাদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের নয় মাসে তাদের নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে বিদেশিদের মোট লেনদেন ছিল ৯ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেয়ার ক্রয় ছিল ৫ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। চলতি বছর বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ছিল জুন মাসে। সে সময় ৩৯০ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ হয়। এছাড়া জানুয়ারিতে ১৮৬ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২৩৮ কোটি টাকা, মার্চে ৩২৯ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৭০ কোটি টাকা, মে ১৫৩ কোটি টাকা, জুলাইতে ২০০ কোটি ও আগস্টে ৩১ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ ছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের শেষার্ধ থেকে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। তাদের বিনিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ব্যাংক খাতে। গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংক খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ছিল ৭ দশমিক ৭৭। আর গতকাল এ খাতের পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ এ। গত সাত বছরে এটিই ব্যাংক খাতের সর্বোচ্চ পিই রেশিও। এছাড়া চলতি বছর শুধু ব্যাংক খাতের শেয়ারের গড় মূল্য বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। এসব বিবেচনায় বিদেশিরা ব্যাংকখাত থেকে তাদের মুনাফা তুলে নেওয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন। সম্প্রতি যেসব ব্যাংক থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালে বিদেশিদের হতে এ ব্যাংকটির ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার ছিল, যা বর্তমানে শূন্যে নেমে এসেছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বিদেশি অংশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এস আলম গ্রুপ কিনে নেওয়ায় এ ব্যাংকটিতেও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। ব্যাংক ছাড়া যেসব কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগ কমে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বাটা সু কোম্পানি, বার্জার, আরগন ডেনিমস, এনভয় টেক্সটাইলস ও আইপিডিসি। এর বাইরে বেশকিছু কোম্পানির শেয়ার সম্প্রতি বিদেশিরা বিক্রি করেছেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিদেশিদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং লিমিটেড, আইডিএলসি, সিটি ব্যাংক, একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, আমরা নেটওয়ার্ক, বিএটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস উল্লেখযোগ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর