ব্যাংকিং খাতের সুশাসন অনিশ্চিত

, অর্থনীতি

সেন্ট্রাল ডেস্ক ১ | 2023-08-31 05:22:17

বেসরকারি দুই বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় আকষ্মিক বড় পরিবর্তনে এই খাতে পেশাগত উৎকর্ষতা নিয়ে পেশাদার ব্যাংকার, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং স্মাপ্রতিক সময়ে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনে দেখা দিয়েছে এ পরিস্থিতি। পেশাদার ব্যাংকাররা শঙ্কিত এ কারণে যে, তাদের চাকুরীর মেয়াদ না ফুরালেও কোন কারণ ছাড়াই চাকুরি থেকে যে কোন সময় বিদায় নিতে হতে পারে। অন্যদিকে এ ধরনের পদক্ষেপে ব্যাংকিং পেশায় পেশাদারিত্বের বিকাশ ও এই খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা নিয়ে সন্দিহান অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতে এখন বেশি প্রয়োজন সুশাসন। এর অভাব সরকারি বেসরকারি উভয় ব্যাংকেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের ইচ্ছায় প্রধান নির্বাহীও উচ্চ স্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যার বহু কিছুই ব্যাংকিং নীতি ও নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর কর্ণধারদের অবস্থাও একই রকম। তবে এখানে একটি অতিরিক্ত উপাদান রয়েছে এবং তা হচ্ছে নির্দেশনা। এর ফলে খেলাপী, চুরি, এক কথায় লুটপাটের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও আশঙ্কাজনক ভাবে ঋণ খেলাপী সৃষ্টি হয়েছে। সেই সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে এই সব ঘটনা চাপা দিয়ে রাখছেন। অনৈতিক ব্যাংকিংয়ের পেছনে পরিচালকদের ভূমিকার কথাও অনেক পেশাদার ব্যাংকার বলে থাকেন। তফসিলি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীদের নিয়োগ, পদত্যাগ, অপসারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই এমন কিছু বিষয় অনুমোদন দিচ্ছে যা তাদের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের প্রণীত নীতিমালা অনুসরণে দূঢ় নয়। ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রধান নির্বাহী নিযুক্তর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে নিযুক্ত প্রধান নির্বাহীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া তার পদ থেকে বরখাস্ত, অব্যাহতি প্রদান কিংবা অপসারণ করা যাবে না। তবে নিয়োগ চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগে প্রধান নির্বাহী চুক্তি বাতিল করতে চাইলে বা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চাইলে পদত্যাগের প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে কমপক্ষে এক মাস পূর্বে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিকট দাখিল করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ মেয়াদ পূর্তির আগে কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চাইলে কিংবা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলে তার কারণ উল্লেখ করে এক মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হঠাৎ পদত্যাগ করতে হয়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। কিন্তু বাংলদেশ ব্যাংকের নির্দেশ পুরোপুরি ভেঙে এটি হয়েছে। গত সোমবার ব্যাংেকের বিশেষ পষর্দ সভায় তার পদত্যাগ পত্র উপস্থাপন করা হয়। সেটি ওই দিনই অনুমোদন করে পর্ষদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেটি ওই দিনই অনুমোদন করে দেয়। একই সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ওই দিনই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়োগ দিয়ে সেটিও অনুমোদন নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। নতুন প্রধান নির্বাহী পরের দিন কাজে যোগ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেক্ষাপট যাই হোক এভাবে একজন এমডির বিদায় কোন ভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া আমাদের জারি করা আদেশও লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকে যা হয়েছে তা ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এমডিদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পর্ষদের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু সম্প্রতি আমরা যা দেখছি তাতে শঙ্কা বাড়ছে। এভাবে এমডিদের বিদায় ব্যাংক খাতের সুশাসন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাকে প্রশ্নে ফেলছে। তিনি বলেন, পর্ষদ চাইলে এমডিকে বিদায় দিতেই পারে। আবার এমডিও বিদায় নিতে পারে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে প্রধান নির্বাহীরা কতটা অসহায় ভাবে ব্যাংকে কাজ করছেন তা বুঝতে পারছি। কোন এমডি পর্ষদের অন্যায়কে প্রশয় না দিতে চাইলে তাদের জন্য চাকুরি করা কঠিন। ফলে এমডিরা সব সময় পর্ষদের সব অন্যায়কে সায় দিয়ে যান। এটি দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তিনজন প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন। তারা কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে সবাই বলেন, আমরা কতটা অসহায় ভাবে চাকুরি করছি তা দেখতে পারছেন। পর্ষদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অভিভাবক। তারাও আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে না। এটি অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের ইচ্ছে মতো সরকার ব্যাংক কোম্পানী আইন আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা সংশোধনীটি অনুমোদন করেছে। নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ি, একই পরিবার থেকে চারজন্য পরিচালক একই পর্ষদে থাকতে পারবেন। এর ফলে পর্ষদে উদ্যোক্তাদের দাপট এবং শক্তি আরো বাড়বে। এমডিরা আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়বেন বলে সংশ্লিষ্টদের মত। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) এর চেয়ারম্যান আনিস এ খানকে টেলিেেফান করলে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমরা খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমরা এই পর্যায়ে আছি। আমাদের সমাজ আছে। পরিবার আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর