কপারটেকের লেনদেন শুরু ৫ আগস্ট

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 13:38:23

বিতর্কিত কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন শুরু আগামী ৫ আগস্ট থেকে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানির ট্রেডিং কোড: "COPPERTECH" এবং কোম্পানি কোড: ১৩২৪৭। ক্যাটাগরি হবে ‘এন’।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৬৭০তম সভায় আইপিওর মাধ্যমে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। তারপর গত ৯জুন কোম্পানিটির বরাদ্দ পাওয়া শেয়ারহোল্ডারদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে জমা প্রেরণ করা হয়।

আইপিওর টাকায় কোম্পানিটি প্লান্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন, ভবন ও সিভিল ওয়ার্ক খাত, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত বছরের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুনঃমূল্যায়ন ছাড়া নীট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস রিভ্যালুয়েশন ছাড়া) দাঁড়িয়েছে ১২.০৬ টাকা (কোম্পানিটি কোনো সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন করেনি) এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৬০ টাকা ও ডায়লুটেড শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.০৩ টাকা। ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৭ টাকা।

কপারটেক যে কারণে বিতর্কিত

দেশে এখন একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মুজরি ৮ হাজার টাকা। সেখানে এমডিসহ কপারটেকের ২১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক গড় বেতন-ভাতা মাত্র ৭ হাজার ২১৭ টাকা। এমডিসহ শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা বাদ দিলে বাকি ২০৬ জনের গড় বেতন মাত্র ৪ হাজার ৫৬০ টাকা।

শুধু বেতন-ভাতা নয়, কোম্পানির আইপিও প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আদায়যোগ্য নগদ অর্থ এবং দেনার হিসাবে গরমিল রয়েছে। ঋণ পরিশোধের পরও সর্বশেষ ঋণস্থিতি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। ঋণ কমার পরও অস্বাভাবিকহারে সুদ পরিশোধ বেড়েছে। কোম্পানিটির রাজস্ব আয়ের তুলনায় (টার্নওভার) মজুদপণ্যের হিসাব অস্বাভাবিক বেশি।

কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের শুরুতে আদায়যোগ্য নগদ অর্থ বা রিসিভেবলস ছিল প্রায় ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ওই বছরে পণ্য বিক্রি হয় ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। পণ্য বিক্রি থেকে নগদ আদায় ৫০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। উপরন্তু অগ্রিম বিক্রি আরও প্রায় ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে ক্লোজিং রিসিভেবলস হওয়ার কথা ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

একইভাবে আর্থিক প্রতিবেদনে দেনা হিসাবে ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেখালেও কাঁচামাল ক্রয় এবং এর বিপরীতে পরিশোধ হিসাব করলে অংকটা দাড়ায় ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।

কপারটেকের দেওয়া তথ্যে ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩৩ শতাংশ কমলেও সুদব্যয় বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল প্রায় ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা নামে ২৬ কোটি টাকায়। কিন্তু আগের বছর যেখানে এ ঋণের বিপরীতে পৌনে ২ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করে, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। একইভাবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৭ শতাংশ কমার বিপরীতে সুদ ব্যয় বেড়েছে ৪৬১ শতাংশ। সার্বিক হিসাবে ঋণ ২৬ শতাংশ কমলেও সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ। এছাড়া লিজ ঋণ ৪৫ শতাংশ বাড়লেও সুদব্যয় বেড়েছে ৫ হাজার শতাংশ। অর্থাৎ একদিকে কোম্পানির ঋণ কমেছে, কিন্তু বেড়েছে সুদ পরিশোধের পরিমাণ। এ বৈপরীত্যের বিষয়ে কোম্পানি বা অডিটরের কোনো ব্যাখ্যা বা পর্যবেক্ষণ নেই।

দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রতিটিতে বিক্রয় কার্যক্রমে খরচ মোট বিক্রির ৭৫ শতাংশ। বিক্রয় বাড়লেও কী করে প্রতি বছর খরচ ৭৫ শতাংশ হলো, তার ব্যাখ্যা নেই। কপারটেক প্রতি হিসাব বছর শেষে মজুদ পণ্যের যে দাম উল্লেখ করেছে, তাও অবিশ্বাস্য। গত হিসাব বছরে যেখানে মোট টার্নওভার ছিল ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সেখানে এর ইনভেনটরিজ ৩২ কোটি টাকার। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে যেখানে টার্নওভার ছিল পৌনে ৯ কোটি টাকারও কম, সেখানে ইনভেনটরিজ ছিল পৌনে ১০ কোটি টাকার। মাঝের বছরগুলোর তথ্যও একই রকম। এমন তথ্য বলছে, কোম্পানিটি তার বাজার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন করছে, যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।

কপারটেক আইপিওতে আসার মাত্র দেড় বছর আগে রাতারাতি পরিশোধিত মূলধন ১৫ গুণ বা ১৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ কোটি টাকা করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ আইপিওতে আসার লক্ষ্য নিয়ে অযথা শেয়ার বাড়িয়েছে।

২০১৪ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসা কপারটেকের মালিকপক্ষ নিজেদের শেয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। এতে আইপিও-পরবর্তী সময়ে মালিকপক্ষের মালিকানা ৩০ শতাংশে নেমেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর