ঈদের পর শ্রম পরিবেশ অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা

, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-28 10:48:36

ঢাকা: অন্যান্য বছরগুলোতে ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে অশান্ত হয়ে উঠে শ্রম পরিবেশ। তবে এবার ঈদের আগে বেতন বোনাস নিয়ে নয়, বরং ঈদের পর ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে শ্রম পরিবেশ খানিকটা উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা জানা গেছে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে।

সাধারণত প্রতিবার রমজান মাসে ঈদুল ফিতরের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে। তবে এবার বেশিরভাগ কারখানাই বেতন-বোনাসের বিষয়ে সচেতন হওয়ায় হাতেগোনা দু’একটি কারখানা ছাড়া তেমন কোথাও সমস্যা হবে না। তবে ঈদের পরে জুলাই মাস নাগাদ ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে দানা বাঁধতে পারে শ্রমিক অসন্তোষ। ফলে শ্রম পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

শ্রম পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যেই বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি) নেতৃবৃন্দকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছুটা আভাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি দাবি করছে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু এ দাবি মানা সম্ভব না। সাড়ে সাত হাজার টাকার ওপর মালিকরা ন্যূনতম মজুরি মেনে নিতে পারবে না। শুনেছি, ঈদের পরে শ্রমিকরা কিছুটা গণ্ডগোল করতে পারে। আমরাও নানাভাবে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছি।

এসব বিষয় নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তবে ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমাদের শিল্পের এখন সেই সক্ষমতা নেই। নানা বাধা-বিপত্তিতে ব্যবসা চালাচ্ছি আমরা। ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা হলে অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন শ্রমিকরাই বিপাকে পড়বে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলেই ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

অন্যদিকে ‘কারখানা বন্ধ হওয়ার হুমকি দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না’- বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু।

তিনি বলেন, যতোবার ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মালিকরা প্রতিবারই কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এবার আর লাভ হবে না। একজন শ্রমিকের বেতনের ৬০ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। একজন সাধারণ কর্মক্ষম মানুষের যে পুষ্টি দরকার তাও পান না শ্রমিকরা, কারণ তাদের ক্রয় ক্ষমতা নেই। আমরা শুনছি বিজিএমইএ’এর নেতারা গড়িমসি করে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের কাজে ধীরগতি আনছেন, যাতে সামনের জানুয়ারি মাস থেকে বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে শ্রমিকরা এবার আর আপোস করবে না। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবেন শ্রমিকরা।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গঠন করা হয়েছে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। বোর্ডকে ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই মাসের মধ্যে ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশমালা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। মালিকদের সক্ষমতা ও শ্রমিকদের নানা সমস্যা নিয়ে ১৯ মার্চ ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর