নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-12 08:37:56

আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সব তফসিলি ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতে সুদ ছয় শতাংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স কক্ষে ব্যাংক মালিক ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং ব্যাংক মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে শুরু হওয়া বৈঠকে ব্যাংক মালিক ও এমডিরা অর্থমন্ত্রীকে আগামী জুন প্রান্তিকের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন। 

পাশাপাশি ব্যবসার খরচ কমানোসহ বেশকিছু কথাও দিয়েছেন তারা। তাদের দেওয়া কথার ব্যত্যয় হবে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণে সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানত গ্রহণের বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদহার কার্যকর করার কথা ছিল।

বেসরকারি ব্যাংকের সবাই একক অংকে সুদহার কার্যকর করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ ব্যাংকসহ মোট ১৬টি ব্যাংক সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনতে পেরেছে। অন্য ব্যাংকগুলো করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

এর আগে ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন ব্যাংকগুলোর দাবি ছিল, আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে না আনলে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ শতাংশে আনা সম্ভব হবে না।

বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, যারা দফায় দফায় সময় দেওয়ার পরও সুদ এক অংকে নামিয়ে আনতে পারেনি সেসব ব্যাংকগুলোকে সুদহার ৯ ও ৬-এ নামিয়ে আনতে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে, ব্যাংক খাত নিয়ে গ্রাহকরা যেন কোনো রকম অস্তিত্ব সংকটে না পড়ে সেজন্য দেশে কোনো ব্যাংক-কে দেউলিয়া হতে দেবে না সরকার। প্রয়োজনে সব ধরনের নীতি-সহায়তা দিয়ে পাশে থাকবে।

খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঋণ গ্রহীতাদের খেলাপি ঋণ হতে পারে। তাদের দেখাশোনা আমরা করব। সব মানুষ টাকা নিয়ে ফেরত দেবে না এমন নয়। তবে যারা ইচ্ছা করে টাকা নিয়ে ফেরত দেবে না তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকা নিয়ে এরা কোথাও পালিয়ে যেতে যেন না পারে সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের হার কমে আসবে। আর প্রতি প্রান্তিকে এ নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বাইরে কেউ যেতে পারবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে আমাদের অর্থনীতি বড় হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুটা সময় প্রয়োজন। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারব। আমরা চাইলেই একটি ব্যাংক বন্ধ করে দিতে পারি না, কারণ এগুলো আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা। চাইলেই একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংক যখন সংকটের মুখে পড়েছিল তখন আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। এই মুহূর্তে বেসিক ব্যাংক একটি দুর্দশাগ্রস্ত সময় পার করছে। আমরা তাদেরকেও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সবাই মিলেই এগিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর