তারপরও চামড়া পাচারের শঙ্কায়

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 02:41:45

কোরবানির যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সক্রিয় হয়ে উঠেছে চামড়া পাচারের সিন্ডিকেট। ফলে পর্যাপ্ত লবণ মজুদের পাশাপাশি সহজ শর্তে চামড়া কিনতে ৬০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়ার পরও কোরবানির চামড়া পাচারের শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, সিন্ডিকেটরা মোটা অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে কম দামে কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব চামড়ার বড় একটি অংশ ভারতে পাচার করারও চেষ্টা করছে। ফরিয়া ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর কম বলে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা নিজের প্রয়োজনে বেশি চামড়া কিনছেন না।

এর ফলে একদিকে চামড়ার প্রকৃত দামও পাচ্ছেন না মালিকরা। অন্যদিকে দেশের গরুর চামড়া বিদেশে পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে, ব্যবসায়ীদের আপত্তির পরও গত বছরের চেয়ে এবার গরুর চামড়ার দাম কমানো হয়নি। বরং গরুর চামড়ার প্রধান উপকরণ লবণ, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লবণ মজুত রাখা হয়েছে। এবারের কোরবানি ঈদে ঢাকার প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গরু ও মহিষের চামড়ার পাশাপাশি খাশির কাঁচা চামড়ার দাম সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই হারে দুম্বার চামড়ার দামও নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম অনেক কম।এ কারণে রফতানিও বেশি হয় না। ফলে ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে চায় না। তাই এবারও চামড়া পাচারের শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, অথচ এই চামড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বাংলাদেশের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা আছে। শুধু তাই নয়, ওদের লোকাল মার্কেটও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়। তাই ভালো দামের আশায় দেশের একশ্রেণির অসাধু চক্র কোরবানির ঈদ ঘিরে চামড়া পাচারের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে; যা দেশের চামড়া শিল্পকে আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে।

ব্যাংকিং সূত্র মতে, চামড়া খাতে দেয়া ঋণ সহজে আদায় হয় না। বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। তারপরও শিল্পের স্বার্থে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে এবার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, চামড়াশিল্পের স্বার্থে কাঁচা চামড়া সংগ্রহে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যার সিংহভাগই দিয়ে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংক। প্রতিবছর ঈদুল-আজহার আগে এ ঋণ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী যারা আগের বছরের ঋণ পুরোপুরি শোধ করে শুধু তারাই এ ঋণ পায়। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের বিবেচনায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দাম কমানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারার গত বছরের মতেই দাম নির্ধারণ করেছে। তবে চামড়ায় পরিমাণ মত লবণ দিলে চামড়া ঠিক থাকলে ন্যায্য মূল্য পাবে, চামড়াও পাচার হবে না। কিন্তু লবণের দাম বাড়লে কিংবা প্রয়োজনীয় লবণ না পেলে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্ক রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর