'জোগান সংকটে' পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী!

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-24 16:06:27

নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থলি পণ্য পেঁয়াজ। যেকোনো তরকারি রান্না করতে পেঁয়াজ অপরিহার্য। কোরবানির ঈদের পর পেঁয়াজের দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী। সরকারি হিসাবে পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও জোগান পর্যাপ্ত হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি পেঁয়াজের জোগান কম।

তাদের দাবি, সরকারি হিসাব সঠিক নয়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা এবং ভারতে দাম বাড়ায় পেঁয়াজের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। তাছাড়া বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তবে অন্যান্য সবজির দামের তুলনায় পেঁয়াজের দাম খুব বেশি নয়।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারের খুচরা, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রোববার মিরপুর-১ কাঁচাবাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার গলিতে ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়।

অন্যদিকে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দামও বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ ৪৪/৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২-৪৫ টাকা ও ক্রস (ভারতীয় বীজ কিন্তু দেশের মাটিতে উৎপাদন হয়) জাতের পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে এবার পেঁয়াজের মোট সরবরাহ হয়েছে ৩৬ লাখ টন। বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। সুতরাং উদ্বৃত্ত আছে ১২ লাখ টন। সেই হিসাবে পেঁয়াজের দাম কম থাকার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন! পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে আমাদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ক্রেতারা।

মিরপুর-১ বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শামসুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ঈদের আগে দেশি পেয়াঁজ কিনেছি ৩৫/৪০ টাকায়। তখন দাম কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। ঈদের পরই দাম বাড়তে শুরু করে। গেল সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি। আজ কিনছি ৫০ টাকা কেজি দরে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু দামে তার কোনো প্রভাব নেই। নিশ্চই কোথাও সিন্ডিকেট কাজ করছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে তারা।’

খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আজ ৪৫ টাকা কেজি পাইকারিতে কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় যে ব্যক্তি ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন তিনি এখন ২ কেজি কিনছেন।

দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিসংখ্যান তৈরি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ডিএই ও বিবিএস সমন্বিত পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১.৬০ লাখ মেট্রিকটন, সেখানে উৎপাদিত হয়েছে ২৫.৪২১ লাখ মেট্রিকটন, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪ লাখ টন বেশি। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পরিসংখ্যান এখনো প্রস্তুত হয়নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে (ঋণপত্র নিষ্পত্তি) ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। এতে মোট সরবরাহ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ লাখ টন। কিন্তু বাজারে সে তুলনায় পেঁয়াজ নেই। বরং সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ আমদানির ওপর আমরা নির্ভরশীল। ভারতে বন্যার কারণে ১২ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২৫ টাকা হয়েছে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়েছে।

জানতে চাইলে মিরপুর -১ কাঁচাবাজারের পাইকারী দোকান সততা বাণিজ্যালয়ের মালিক আব্দুল লতিফ মোল্লা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘সরকারের হিসাব পুরাতন। এ বছর বন্যায় দেশের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দেশি পেঁয়াজের বাজার চড়া। বন্যা না হলে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ টাকার বেশি হতো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘পেঁয়াজের ৯৯ শতাংশই আমদানি হয় ভারত থেকে। মাঝে মধ্যে ভারতে দাম অনেক বেড়ে গেলে কিছু পেঁয়াজ চীন, মিসর, তুরস্ক থেকেও আসে। তবে ভারতে সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কয়েকগুণ বেঁড়েছে। ভারত থেকে এলসি খুলে কিনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা দরে। সেখান থেকে আড়তে পৌঁছানো পর্যন্ত খরচ হয় প্রতি কেজিতে গড়ে ৪ টাকা। সে হিসেবে ভারতীয় পেঁয়াজের দামও পাইকারিতে ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

পাটোয়ারি বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘দেশে নতুন পেঁয়াজ উঠতে আরো দুই/আড়াই মাস বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে হলে অবশ্যই আমদানি বাড়াতে হবে। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর