টিআইবি’র বিবৃতি অবমাননাকর দাবি বেক্সিমকোর

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 17:06:46

ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সিদ্ধান্তের খবরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিবৃতিকে অবমাননাকর বলে দাবি করেছে শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ। এমনকি টিআইবি’র ওই বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছে কোম্পানিটি।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামালকে পাঠানো হয়েছে। সকালে ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে গিয়ে ওই চিঠি হস্তান্তর করেন কোম্পানির পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে বেক্সিমকো গ্রুপের ৪৩০.০৫ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতি দেন, যা পরদিন ডেইলি স্টারে ছাপা হয়।

সোহেল এফ রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বেশ কিছু আপত্তিকর অভিযোগের পাশাপাশি দ্য ডেইলি স্টারে টিআইবি নির্বাহী পরিচালকের একটি উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। ‘ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে একদল লুটেরা আইনপ্রণেতা হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছে। টিআইবির বিবৃতিতে যেহেতু বেক্সিমকো গ্রুপের অনুকূলে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের একটি ঘটনা প্রাধান্য পেয়েছে, সেহেতু এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমাদের গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে ওই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের দেওয়া বিবৃতিতে ‘লুটেরা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটাতে তারা ‘অত্যন্ত অপমাণিত’ বোধ করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই মন্তব্য শুধু আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের জন্যই নয়, বরং সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন ও আমাদের গ্রুপের ৬০ হাজার কঠোর পরিশ্রমী কর্মীর জন্যও অবমাননাকর।’

টিআইবির বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের দীর্ঘ সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে,‘টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের এ ধরনের ‘আপত্তিকর ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য অনভিপ্রেত এবং টিআইবি ও সংস্থাটির বর্ণিত মূল্যবোধের জন্য ‘অমর্যাদাকর’।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সালমান এফ রহমান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন। ফলে গত বিএনপি সরকার ও সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেক্সিমকো গ্রুপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চরম বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়। ওই সময় আমাদের গ্রুপে ঋণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়, যেটি পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এটা সত্য যে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অরাজনীতিকরণ কায়েম করা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সফল ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয় এবং জীবন ও ব্যবসা রক্ষার বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদার অর্থ পরিশোধে বাধ্য করা হয়।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কয়েকজন ক্ষমতাসীন ব্যক্তির ওই ‘অবৈধ চাঁদাবাজির’ সমালোচনা টিআইবি কখনো করেছে কিনা- সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপকে কেন ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আবেদন করতে হলো- তার একটি ব্যাখ্যাও চিঠিতে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টানা সাত বছর বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নেতিবাচক পদক্ষেপ’ নেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যাল শাখাকে প্রায় দুই বছর এলসি খুলতে দেওয়া হয়নি। এই ধারাবাহিক বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে কোম্পানির মধ্যে তারল্য সংকট দেখা দেয়। যার ফলে আমরা সময় মতো ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে সমর্থ ছিলাম না। আমাদের মতো একটি বড় কোম্পানির জন্য এই পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক ছিল যে, আমরা এখনো সেখান থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছরে বেক্সিমকো বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, ‘এ কারণেই বিভিন্ন ব্যাংকে আমাদের অ্যাকাউন্ট এখন নিয়মিত ও অশ্রেণিভুক্ত অবস্থায় আছে। সুতরাং টিআইবির বিবৃতিতে বেক্সিমকোকে ‘শীর্ষ ঋণখেলাপি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় আমরা ভীষণ বিস্মিত হয়েছি।

সোহেল এফ রহমান বলেন, ‘প্রথমবার তাদের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের অনুমোদন পাওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ‘স্বাধীন ও অনুমোদিত’ অডিট ফার্মকে দিয়ে বেক্সিমকোর সম্ভাব্য অর্থ প্রবাহ নিরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই অডিট ফার্ম জানিয়েছিল, পুরো ঋণ পরিশোধ করতে বেক্সিমকোর ১২ বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যংক আমাদের ঋণকে মেয়াদী ঋণ ও কার্যকরী মূলধন ঋণ হিসেবে ভাগ করে। কার্যকরী মূলধন ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের ছয় বছর সময় দেওয়া হয়। তবে ওই সময়ই আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, ছয় বছরের মধ্যে ওই ঋণ পরিশোধ করা আমাদের আর্থিক প্রবাহ অনুযায়ী সম্ভব নাও হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা অনুমান করছি, বিদ্যমান আর্থিক প্রবাহ অনুযায়ী নিয়মমাফিক কিস্তি পরিশোধে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রথম পুনঃতফসিলিকরণের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে স্বাধীন অডিট প্রতিষ্ঠানের মূল সুপারিশ পালন করার জন্য অনুরোধ জানাই। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। নিয়মিত অ্যাকাউন্টধারী অন্যান্য ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর