৪১ বিমা কোম্পানির কাছে এসবিসির পাওনা ৬শ’ কোটি

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-20 03:25:25

পুনঃবিমার প্রিমিয়াম বাবদ ৪১টি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি ৪১ লাখ ১ হাজার ২৬৯ টাকা।

সরকারি প্রতিষ্ঠান এসবিসি ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে এই টাকা পাবে বেসরকারি বিমা কোম্পানির কাছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো এই টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স লিমেটড। এরপরে রয়েছে কন্টিনেন্টাল, প্রগতি, ইসলামিক এবং পিপল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

নিময় অনুসারে ঝুঁকি কমাতে কোম্পানিগুলোর বিমার ওপর শতভাগ পুনঃবিমা করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ সাধারণ বিমা করপোরেশনে করা বাধ্যতামূলক। বাকি ৫০ শতাংশ পুনঃবিমা কোম্পানি ইচ্ছা করলে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে করতে পারে। পুনঃবিমার এ আইন অনুসারে ৪১টি বিমা কোম্পানির কাছে এই টাকা পাবে এসবিসি।

কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধ করছে না। এতে এসবিসির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমাখাতও। বিমা কোম্পানির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিমা কোম্পানিগুলো দাবি করছে, সাধারণ বিমার কাছে কোম্পানিগুলোর দাবি রয়েছে। সাধারণ বিমা করপোরেশন সেই দাবিগুলো পরিশোধ করলেই পাওনার পরিমাণ অনেক কমে আসবে।

বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদিচ্ছার অভাবের পাশাপাশি নগদ অর্থ সংকটের কারণে এসবিসি’র টাকা পরিশোধ করতে পারেনি বেশির ভাগ কোম্পানি। কারণ, নিয়ম অনুসারে বিমা কোম্পানিগুলো এজেন্টদের ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে পারে। কিন্তু তারা সে নিয়ম ভঙ্গ করে এজেন্টদের ৬০-৭০ শতাংশ হারে কমিশন দিচ্ছে। ফলে কমিশনের টাকা দেওয়ার পর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়, অফিস খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের হাতে কোন টাকা থাকে না। এ অনৈতিক প্রতিযোগিতায় কোম্পানিগুলো নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে।

পুনঃবিমা বিভাগের প্রধান ও এসবিসি’র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, এসবিসি’র পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি যেসব কোম্পানির দাবি রয়েছে তাদের দাবি পরিশোধের চেষ্টা করছি।

৩০ জুন, ২০১৯ পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, এসবিসি’র সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৬০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৬ কোটি ৬৮ হাজার ৫৫ হাজার ৯৪৪ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে পাওনা ৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৩৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, চতুর্থ স্থানে থাকা ইসলামিক ইন্স্যুরেন্সের কাছে পাওনা ৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং পঞ্চম স্থানে থাকা পিপল ইন্স্যুরেন্সের কাছে পাওনা ৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এরপরে যথাক্রমে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কাছে এসবিসির ৩০ কোটি ৬৭ টাকা পাওনা রয়েছে। জনতার কাছে পাওনা ৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, গ্রিন ডেল্টার কাছে পাওনা ৩০কোটি ৩০ লাখ, মেঘনার কাছে ২৯ কোটি ৮৫ লাখ, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ইস্টল্যান্ডের কাছে ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং এশিয়ার কাছে এসবিসির পাওনা ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বিজিআইসির কাছে পাওনা ১৭কোটি ৮০ লাখ টাকা। রিপাবলিকের কাছে ১৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ইস্টার্নের কাছে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়ালের কাছে ১৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, এক্সপ্রেস ১১ কোটি ৩৭ লাখ এবং প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের কাছে এসবিসির পাওনা ১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বাকি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছে এসবিসির পাওনার পরিমাণ ১০ কোটি টাকার নিচে। এগুলো হলো—ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক, সোনার বাংলার, মার্কেন্টাইল, সিটি জেনারেল, দেশ জেনারেল, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল, বিডি করপোরেশন, বিডি ন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল, গ্লোবাল, কর্ণফুলী, নিটল, নর্দান, প্যারামাউন্ট, ফনিক্স, প্রাইম, তাকাফুল, ইউনাইটেড, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথ এশিয়া, সিকদার, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স এবং পূরবী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর