পেঁয়াজের দাম কবে কমবে বা নিয়ন্ত্রণে আসবে তা বলা মুশকিল বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, আমরা বলতে পারবো না এটা কবে নাগাদ কমবে।
দাম কমার ব্যাখা দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একমাত্র কমার পথ যত বেশি মিশর থেকে আনতে পারব এবং নিজস্ব উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা মাঝামাঝিতে নিজেদের উৎপাদিত কাঁচা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। ফলে মিশর থেকে আমদানির ফুল ফ্লো যখন হবে তখন হয়তো আমরা ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করতে পারব। তবে কথা হচ্ছে আবার যদি হঠাৎ করে দামটা না বাড়িয়ে দেয়।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিং-এ মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের দাম কবে নাগাদ কমবে তা বলা মুশকিল। তবে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ মাত্রায় চলে আসলে আশা করতে পারি ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে সহনীয় পর্যায়ে যাবে। এখন থেকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সব পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
সরকার বেশি দামে কিনে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে ৪৫ টাকা দরে খাওয়াচ্ছি। এয়ারে ( উড়োজাহাজে) যত মাল (পেঁয়াজ) আসছে সবগুলো ল্যান্ডিং কস্ট পড়ছে প্রায় ২৫০ টাকা। যেটা ওই ২৫০ টাকা দরে কিনেই কিন্তু ৪৫ টাকা দরে মানুষকে খাওয়াচ্ছি।
এর আগে বলেছিলেন ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজের দাম আসবে না সেটা কিসের ভিত্তিতে বলেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, সেদিন টেকনাফ বোর্ডে পেঁয়াজের দর ছিল ৮২ টাকা। তার ভিত্তিতেই বলেছিলাম।
তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের পেঁয়াজ যদি না থাকে। আমাদের যদি ইমপোর্ট করতে হয়, তাহলে ইমপোর্টের যে প্রাইজ থাকবে সেটার ওপর ভিত্তি করেই তো বাজারে দাম পড়বে।
প্রশ্ন উঠেছে সাড়ে ৩৭ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে এর জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ টিসিবি সাড়ে ৩৭ টাকা করেই নিচ্ছে। কিন্তু এর ওপর ভ্যাট এবং অন্যান্য ট্যাক্স দিয়ে সাড়ে ৪২ টাকা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরেই। ওখান থেকে ট্রাকে এনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। ওটাতে লাভ নাই, লোকসানও নাই।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সারাদেশে প্রতিদিন ৩০০ টন করে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। কেননা গত পরশু জাহাজে আমাদের কিছু মাল আসছে। এতদিন চেষ্টা করার পর আমাদের প্রথম চালান মাত্র পরশু দিন আসল। মিশর থেকে আনা এ পেঁয়াজের দাম পড়বে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এর বাইরে মিয়ানমার থেকে যে মাল আসছে টেকনাফে তাদের নিজেদের বাজারে দাম আছে ১৫০ টাকার ওপরে। এই মুহূর্তে ভারতের মার্কেটে পেঁয়াজের দাম ১২০ রুপি। সেটা আমাদের টাকায় ১৪২ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ ব্যাখা করে বলেন, আমরা কেমন করে জানবো যে ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধ করে দেবে। গত কয়েক বছরের হিসেব মতে আমাদের যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তার ৯০ ভাগই ভারত থেকে। আমরা কেউ ধারণা করতে পারি নাই তারা হঠাৎ করে রফতানি বন্ধ করে দেবে। গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নভেম্বর মাসে গড়ে আমদানি ছিল ১ লাখ টন, অথচ এই দুই মাসে যেটা কম পড়ে গেল। শুধুমাত্র মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অল্প কিছু ইমপোর্ট আসছে তাও মাত্র ২৫ হাজার টন। প্রতি মাসে ঘাটতি ৭৫ হাজার টন। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাম পড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
দেশের বাজারে চহিদা ও মজুদের হিসাব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কমানো যেতে পারে যদি টিসিবির মাধ্যমে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করা যায়। কিন্তু সারাদেশে সমস্ত পেঁয়াজ তো টিসিবির দেওয়া সম্ভব না। প্রতিদিন চাহিদা সাড়ে ৬ হাজার টন। আমাদের প্রতি বছর ২৪, ২৫ লাখ টন চাহিদা। আগের তিন বছরের রেকর্ড ঘাটলে তাই আসে। সেখানে ৭-৯ লাখ আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন হয় ২৩-২৪ লাখ টন তার মধ্যে কিছু পচে যাওয়া সব কিছুর পর থাকে প্রায় ১৭ লাখ টন। শুধু রমজান মাসেই চাহিদা ৫ লাখ টন।
তিনি বলেন, আমাদের একটাই পথ দেশে উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেটা নিশ্চিত করা। আগামীতে উৎপাদনকারীরা যখন দাম পেতে শুরু করবে তখন আমদানি কমিয়ে দেব। যখন দাম পড়ে যাবে তখন কৃষকদের স্বার্থে ট্যাক্স বাড়িয়ে আমদানি বন্ধ করা হবে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা আমাদের বন্ধু মানুষ, তারা সহযোগিতা করছেন। ধরপাকড় করে লাভ নেই। দাম কবে কমবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা কেউ বলতে পারবে না।’