ব্যাংকাররা সুবিধা নিয়ে সুদহার কমাননি: বাণিজ্যমন্ত্রী

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-20 14:09:55

সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার জন্য ব্যাংকাররা অনেক সুবিধা নিলেও সুদহার কমাননি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, এনবিআর যেভাবে রাজস্ব আদায় করছে এটারও পরিবর্তন হওয়া উচিত। করের আওতা না বাড়িয়ে একই ব্যক্তির ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে ব্যবসা করা যায় না।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ৩ দিনব্যাপী সিরামিক এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ইফরান উদ্দিন প্রমুখ।

টিপু মুনশি বলেন, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারে না। এত সুদ হলে একটার পর একটা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়বে। এ বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন। এ জন্য ব্যাংকারদের নানা সুবিধা দেওয়া হলো। ব্যাংকাররা সুবিধাটা পুরোপুরি নিলেন। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সুদহার এক অংকে আনলেন না।

 আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয়েছে সিরামিক এক্সপো

তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীও অনেকবার তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো প্রাইভেট ব্যাংক সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনেনি। আমাদের দেশই পৃথিবীর ব্যতিক্রমী দেশ যেখানে স্প্রেড অনেক হাই। অন্যান্য দেশে যেখানে স্প্রেড আড়াই থেকে তিন, আমাদের দেশে এটা ৬ শতাংশেরও উপরে। যেটা হওয়া উচিত নয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যা বলি তার উল্টোটা পত্রিকায় ছাপা হয়। সেদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে বললাম যে, আমি পদত্যাগ করলে যদি পেঁয়াজের দাম কমে যায় তাহলে পদত্যাগ করাটা এক মিনিটের ব্যাপার। পরের দিন পেপারে খবর আসলো যে, আমি পদত্যাগ করব। এটা আমাদের প্রব্লেম। ব্যাংকারদের ক্ষেত্রেও একই কথা। তারা সুবিধা নিলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বললেন তারপরও কাজের কাজের কিছুই হলো না।

তিনি বলেন, এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের ব্যবসায়ীরা যাবে কোথায়? এ ধরনের কথা বললে মনে হবে যে মন্ত্রী বলছে না, ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোন ব্যবসায়ী বলছে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে আমি একজন ব্যবসায়ী, এ জন্য আমার কথাবার্তা ব্যবসায়ীদের মতো। মন্ত্রীর মতো ভাব এখনও আসে না।

টিপু মুনশি আরও বলেন, আমি অর্থমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকি, আর অর্থমন্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুদহার এক অংকে নামিয়ে না আনলে কোন ব্যবসা করা যাবে না। অন্তত জেনুইন ব্যবসা করা যাবে না। অন্য কিছু করা গেলে যাবে।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকারদের নিয়ে বসেছিলেন। সম্ভবত জানুয়ারি থেকে সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেখি কী হয়, আমাদের ভরসা করা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।

এনবিআর যে পদ্ধতিতে রাজস্ব সংগ্রহ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ পদ্ধতিটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে আয়কর দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু কয়জন দেয়? এই পরিধিটা বড় না করে যারা দেয় তাদের উপরই যদি চাপ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে যারা দেয় তাদের তো নাভিশ্বাস উঠে যাবে, যোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ট্যাক্স প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ছে না, যারা দিচ্ছে তাদের উপরেই চাপ বাড়ছে। তাহলে ব্যবসার প্রসার হবে কিভাবে? তারপরও ব্যবসায়ীদের স্যালুট জানাই এসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা দেশের বাণিজ্যকে বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আমি আগামীতে এনবিআর’র সঙ্গে বসব, এ ব্যাপারে কথা বলব। ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান। এনবিআরকে ট্যারিফ কামিশনের সঙ্গে বসে ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে বলব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর