বিমা দাবি পূরণে হোমল্যান্ড লাইফের গড়িমসি

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 06:27:13

কেউ টিউশনি করে, কেউ ডিম বিক্রি করে, কেউবা বাসাবাড়িতে কাজ করে বিমার কিস্তি দিয়েছেন। বিমার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও কষ্টে উপার্জিত ৯৮ জন গ্রাহকের বিমা দাবি পূরণ করছে না বেসরকারি বিমা কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

সায়েম মুন্সী, মৌসুমী, আমিনা, হাসিনা, খোরশেদা, সিমা আক্তার ও নাজিরাসহ মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার দরিদ্র এই গ্রাহকরা কোম্পানির কাছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা পাবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পাওনা টাকার জন্য দিনের পর দিন দেন-দরবার করেও টাকা পাননি না তারা।

শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের পাশাপাশি কোম্পানির এজেন্ট ও কর্মকর্তারাও হোমল্যান্ডের প্রধান শাখায় ঘোরাঘুরি করে টাকা তুলতে বিফল হয়েছেন। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ বিমার টাকা পেতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করেছেন তারা। হোমল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিজুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দেখি কী করা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাওনা দাবি পরিশোধ না করে হয়রানি করায় মানুষের আস্থা নেই বিমা কোম্পানিগুলোর ওপর। কোম্পানির এমডি-মালিকরা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে নিজেরা ভোগবিলাস করেন। অথচ গ্রাহকদের বিমা দাবি পূরণ করেন না। তাই বিমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা দিন দিন কমছেই।

হোমল্যান্ডের টংড়িবাড়ী সার্ভিসিং সেন্টারের ইসলামী বিমা প্রকল্পের কর্মকর্তা রুবেল পোদ্দার বলেন, টংগিবাড়ী শাখায় বিভিন্ন মেয়াদী বিমা করেছেন ৯৮ জন গ্রাহক। তাদের বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিমা দাবির অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করছে হোমল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। তাই কোম্পানির বিরুদ্ধে আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করেছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেরাই।

গত অক্টোবর মাসে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগে রুবেল পোদ্দার উল্লেখ করেন, “আমি গত ১২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, গত ১ বছর ধরে গ্রাহকদের মেয়াদ উত্তীর্ণের চেক পরিশোধ করতে পারছি না। কারণ, গ্রাহকের দলিল ও পাস বই প্রাধান কার্যালয়ে পাঠানোর ১১ মাস পরও গ্রাহকদের চেক পাওয়া যায়নি। গ্রাহকরা অফিসে এসে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। আমার গায়ে হাত তুলছেন। আমি ঠিকমতো অফিসেও যেতে পারছি না। বাসায়ও থাকতে পারছি না। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছেন তারা।

তাতেও গ্রাহকরা ক্ষান্ত হয়নি, আমার বিরুদ্ধে তারা উপজেলার শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগও করেছেন। শিক্ষা অফিসার আমাকে ডেকে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এমতাবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকদের চেকগুলো প্রদানে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”

অন্যের বাসায় কাজ করে জমানো টাকায় বিমা করেন টংগিবাড়ীর মৌসুমী। তিনি বলেন, “আমি গরিব মানুষ, প্রতি মাসে কিস্তি দিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমার টাকা দিচ্ছে না। আমি কোথায় যাব, কার কাছে বিচার পাব?”

মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকদের মধ্যে সায়েম মুন্সীর পাওনা ১ লাখ ৯২৯ টাকা। মৌসুমীর পাওনা ১১ হাজার টাকা, আমিনার পাওনা ২৫ হাজার ৯০০ টাকা, হাসিনার ২৫ হাজার ৭৬০টাকা। খোরশেদার ৬৩ হাজার ৫৭৪ টাকা, সিমা আক্তারের ৬৪ হাজার ৪৭ টাকা, হেলেনা বেগমের ১৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং নাজিরার ৫০ হাজার ৮৪৮ টাকাসহ মোট ৯৮জন গ্রাহকের পাওনা প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিতে টালবাহানা করছে কোম্পানিটি।

এ ব্যাপারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য ও মুখপাত্র গোকুল চাঁদ দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। আমরা আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর