বিশ্ব পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় পলিথিন ব্যাগকে। বিশ্বের নানা গবেষণা থেকে জানা গেছে একটি পলি ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার পরে তা মাটির নিচে বা নদী ও সমুদ্রের তলদেশে অক্ষত অবস্থায় থাকে যুগের পর যুগ। এতে নদী হারায় নাব্যতা আর মাটি হারায় উর্বরতা শক্তি। যার কারণে পরিবেশ আজ চরম হুমকির মুখে।
পরিবেশ রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলি ব্যাগ নিষিদ্ধ করার জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও এর বিকল্প হিসেবে তেমন কোন কিছু চোখে পড়েনি বাজারে।
তবে, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) স্টলে গিয়ে দেখা যায়, পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ। পলিব্যাগের বিকল্প হিসেবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগটি নিয়ে কথা হয় বিজিএমসির ব্যবস্থাপক উৎপাদন জোৎস্না আক্তারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, পাটের তৈরি এই সোনালি ব্যাগ বাংলাদেশ নতুন নয়। তবে, বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত না করার কারণে কিছুটা অপরিচিত সাধারণ মানুষের কাছে। শুধু বিগত কয়েক বছর বাণিজ্য মেলাতে আমাদের স্টলে পলিব্যাগের বিকল্প এই সোনালি ব্যাগ রাখার কারণে বেশ পরিচিতি ও প্রচার হয়েছে। আমাদের স্টলে আপাতত শুভেচ্ছা মূল্য হিসেবে প্রতি ব্যাগ ১০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। দামটা একটু বেশি হলেও শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমরা এক হাজারের উপরে সোনালি ব্যাগ বিক্রি করেছি। পূর্ণাঙ্গভাবে যখন বাজারজাত করা হবে এই ব্যাগ, তখন দাম রাখা হবে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ টাকা করে।
কেন এই ব্যাগ সাধারণ পলিব্যাগের থেকে আলাদা? এমন প্রশ্নের জবাবে জোৎস্না আক্তার বলেন, সোনালি ব্যাগ পাটের সেলুলোজ থেকে তৈরি করা। ব্যবহারের পর ফেলে দিলে এক থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই ব্যাগ মাটিতে পচে যায়। পচার পরে যা মাটির জন্য জৈব সার হিসেবে কাজ করে। অনুরূপভাবে পানিতেও ব্যাগ পচতে সময় নেয় সর্বোচ্চ ছয় মাস এবং পচা ব্যাগ পরিণত হয় মাছের খাবারে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সাধারণ পলিব্যাগের তুলনায় ১.৫ গুণ বেশি ভার বহন ক্ষমতা রাখে এবং এই ব্যাগ পোড়ালে ছাই হয়ে যায়।
সোনালি ব্যাগের চাহিদা কেমন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখনো বাণিজ্যিকভাবে এই ব্যাগের উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে যারা ইতিমধ্যে জেনেছেন এই ব্যাগ সম্পর্কে তারা ব্যাপক আগ্রহী। শুভেচ্ছা মূল্যেই আমরা ব্যাগ বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারছিনা মেলায়। আজ আমাদের স্টকে কোনো ব্যাগ নেই। মেলা খোলার পর থেকেই ক্রেতারা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। বিকাল নাগাদ ব্যাগ আসলে আবার বিক্রি শুরু হবে। শুধু বাংলাদেশ নয় দেশের বাইরে থেকেও সোনালি ব্যাগ কেনার ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করেছি আমরা।
পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে স্টোরের দায়িত্বে থাকা বিজিএমসির আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগামী তিন মাসের ভিতরে সোনালি ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। আমাদের যে পরিমাণ সামর্থ্য আছে তাতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হলে আমরা প্রতিদিন এক লাখ পিস সোনালি ব্যাগ উৎপাদন করতে পারবো।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোবারক আহমেদ খান ছয় বছরের গবেষণার পর এই পলিমার তৈরি করেন। তার এই উদ্ভাবন পাট ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এর সোনালি অতীতকে ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই।
রাজধানীর ডেমরার রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে তৈরি হচ্ছে পাট থেকে তৈরি পলিমার ব্যাগ। ২০১৭ সালের মে মাসে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সোনালি ব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নেয়।