চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঘাটতি। আর শতাংশের হিসেবে ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কম আদায় হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসে বড় অংকের ঘাটতি রয়েছে। এ ছয় মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
এনবিআরের তথ্য মতে, ছয় মাসে আমদানি-রফতানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ৪১ হাজার ৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা ও আয়কর এবং ভ্রমণ করে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ আদায় করতে পারেনি। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের ৬ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের হার ১০-১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। তাই এখন পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা।
তবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খাতওয়ারি রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায় হয়েছে। এনবিআরের এই বিভাগ টার্গেটের ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এরপরই ভ্যাটের অবস্থান। ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭৯ দশমিক ০৩ শতাংশ আদায় হয়েছে। সবচেয়ে কম ৭০ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হয়েছে শুল্কে।
এ বিষয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বছর রাজস্ব আদায়ে একটু পিছিয়ে আছি। বড় ঘাটতি হলেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এনবিআরে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। তিনি তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে করের আওতা বৃদ্ধি করবেন। বেশি করে কর আহরণ করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়বে। এতে দেশে উন্নয়ন গতিশীল হবে। সব বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বন্দরে পণ্য জট কমাতে হবে। বন্দর গতিশীলে এনবিআরকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
এনবিআরের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর ১৯ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। আর রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ বিগত ২৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি হয় পাঁচ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয় চার দশমিক ৩৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল দুই দশমিক ৬২ শতাংশ, আগস্ট পর্যন্ত তিন দশমিক ৩৫ শতাংশ ও জুলাই মাস শেষে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই মাস ছাড়া বাকি চার মাসে প্রবৃদ্ধি পাঁচ অঙ্কের ঘর পার করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা আদায় হয়। আর গোটা অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এমন ঘাটতির মুখে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে সোয়া তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। আর আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৬ লাখ ও শুল্ক খাতে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।