ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় রোজ হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ছুটির দিনগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। সবার মতো পরিবারের সঙ্গে মেলায় আসে শিশুরাও। আনন্দেই মেলা উপভোগ করে তারা। কিন্তু মেলা ঘুরতে ঘুরতে কখন যে শিশু হাতছাড়া হয়ে যায় জানে না অভিভাবকরাও। প্রচারকেন্দ্রের মাইকিংয়ে অ্যানাউন্সের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
অভিভাবকদের অসতর্কতায় এভাবে রোজ হাতছাড়া হচ্ছে ৭ থেকে ৮ শিশু। ২-১০ বছর বয়সী শিশুই এ তালিকায় বেশি। ২৫তম বাণিজ্য মেলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০-৩০০ জন শিশু হাতছাড়া হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে এর সংখ্যা ১০-১৫ জন পর্যন্ত হয়েছে। এর তালিকায় দুই এক জন বৃদ্ধও আছে বলে জানা গেছে।
এখন মেলা একেবারেই শেষ পর্যায়ে। আর মাত্র দু’দিন সময় বাকি আছে। যার ফলে মেলায় ভিড় বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন শিশু হাতছাড়া হওয়ার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মেলার অস্থায়ী প্রচার কেন্দ্র থেকে জানা যায়।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণে অস্থায়ী প্রচারকেন্দ্রে মো. সাহাদাত হোসেন ও শাহেদ সরকার নামে দু’জন শিশুকে নিয়ে আসেন পুলিশ কনস্টেবল আরিফুর রহমান। পরিবারের পরিচয় দিতে পারলেও ভয়ে কান্নায় অস্থির হয়ে ওঠে শিশু দুটি। একজন বাসার ঠিকানা দিতে পারলেও, অন্যজন শুধু বোনদের নাম বলতে পেরেছে যাদের সঙ্গে মেলায় এসেছে।
অ্যানাউন্স করার কিছু সময় পর অভিভাবকরা ছুটে আসেন প্রচারকেন্দ্রে। শাহেদ সরকার নামের শিশুটি তার বোনকে দেখে কাঁদতে থাকে। তার বোনও কাঁদতে থাকে। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।
বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও প্রচার কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ফরিদা ইয়াসমিন রিনিতা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় আমাদেরকে। আজকে একটু কম তবে কালকে প্রায় ১৫ জন বাচ্চাকে আমরা পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি। যতক্ষণ বাচ্চাটির পরিবার না আসে ততক্ষণ বিভিন্নভাবে তাদেরকে সামলাতে হয়। ভয়ে কান্নায় অস্থির হয়ে ওঠে বাচ্চাগুলো। যে ঘটনাগুলো আমাদেরকেও ব্যথিত করে। পরিবারের লোকজন যদি প্রচারকেন্দ্রে না আসে তবে শিশুটি যদি পরিবারের ঠিকানা বলতে পারে আমরা পৌঁছে দিয়ে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো ঘটে অভিভাবকদের অসতর্কতার কারণে। শুধু মেলা নয় এমন জনাকীর্ণ স্থানে শিশুকে নিয়ে গেলে তাদের হাত শক্ত করে ধরে রাখা উচিত। একইসঙ্গে কথা বলতে পারে এমন বয়সী শিশুদেরকে নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর শেখানো উচিত। এ বিষয়ে পরিবারের লোকজনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’
শাহেদ সরকারের বোন ঝুমুর বলেন, ‘ও আমার ছোট ভাই। ঘুরতে ঘুরতে অন্যদিকে তাকিয়েছি, হঠাৎ দেখি আমার ভাই নেই। খুব ভয় পেয়েছিলাম। হারিয়ে গেলে পরিবারের কাছে কি উত্তর দিতাম। সত্যিই এটা আমাদের অসতর্কতার জন্যই ঘটেছে। মেলায় ভাইকে নিয়ে এসে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
শিশু সরকার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার খুব ভয় লেগেছিল। আপুদেরকে যদি আর না পেতাম।’
প্রচারকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ বেতারের অপর একজন উপস্থাপক তনিমা করিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মেলা থেকে বাচ্চাদের একেবারে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মেলায় অনেক তৎপর। তবে অভিভাবকদের সতর্কতা খুব জরুরি। এসব ঘটনার ফলে বাচ্চারা ট্রমাটাইজড হয়ে যায়। ছুটির দিন মেলায় শিশুদের না নিয়ে আসাই ভালো। এলেও সন্ধ্যার দিকটা অ্যাভয়েড করা উচিত।’