বায়ুদূষণের কারণে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যাচ্ছে বলে ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। একইসঙ্গে বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২ দশমিক ৫। এতোদিন এই উপাদান সবচেয়ে বেশি নির্গত করত চীন। গত দুই বছরে চীনকে টপকে ওই দূষণকারী স্থানটি দখল করে নিয়েছে ভারত। চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ।
বায়ু দূষণ বলতে বোঝায় যখন বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা ও ক্ষুদ্র অণু অধিক অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায়। রাজধানী ঢাকা দূষিত বাতাসের শহরের র্যাকিংয়ে বর্তমানে নিয়মিতই উপরের স্থানে থাকছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) গত এক সপ্তাহ ধরেই বায়ু দূষণে ঢাকা প্রথম থেকে সপ্তম স্থান অধিকার করছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার বিষয় বলে মনে করে সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদ।
সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দূষিতবায়ু থেকে ক্যান্সার হতে পারে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের ইটভাটার দূষিত বায়ু থেকে নাইট্রোজেন, অক্সাইড ও সালফার-ডাই অক্সাইড অ্যাজমা, হাঁপানি, অ্যালার্জি সমস্যা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেয়। ধূলিকণার মাধ্যমে ফুসফুসের স্লিকোসিস নামে রোগ সৃষ্টি হয়, যা ফুসফুসকে শক্ত করে দেয়। কার্বন-মনো-অক্সাইড রক্তের সঙ্গে মিশে অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সর্বোপরি বহু মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে পড়ে এই বায়ু দূষণ।
এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে প্রতিদিন দুই বার রাজধানীর রাস্তা ঝাড়ু দেয়া এবং সপ্তাহে একদিন রাস্তা পানি দিয়ে ধুয়া। সারাদেশের রাস্তা ধোঁয়ার জন্য ১০০টি গাড়ি আমদানি করা। রাস্তা পরিষ্কারের জন্য সিটি করপোরেশন যেভাবে নাগরিকদের কাছে বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে ঠিক তেমন ভাবে প্রতি পরিবার থেকে ৫ বছরে ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করা।
বায়ু দূষণ রোধের পুরো কার্যক্রম তদারকি করার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করতে হবে, সমসময় কার্যক্রম তদারকি করা এবং ঢাকা নগরী ও তার আশেপাশের নদীর পাড়, রাস্তার পাশে, বিভিন্ন সরকারি জায়গায় পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপন করতে হবে ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ভবন ও বাসা-বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় ও ছাদে মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে বাগান গড়ে তুলার আহ্বান জানানো জানাই।
পাশাপাশি বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা আবশ্যক এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বায়ু দূষণের উৎসগুলো বন্ধ করা ও বায়ুদূষণে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।