করোনায় কাঁকড়া ও কুঁচিয়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:55:45

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অর্ডারকৃত কুঁচিয়া ও কাঁকড়া রফতানি বন্ধ রয়েছে। টাকার অংকে এতে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪০০ কোটি। প্রকৃত হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শতভাগ রফতানিমুখী কুঁচিয়া ও কাঁকড়া এক দিকে মরে যাচ্ছে, পচে নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে চীনের পর সিঙ্গাপুর, হংকং এবং মালেশিয়ায়ও নতুন করে রফতানির অর্ডার বন্ধ হয়েছে গেছে। ফলে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর এবং বরগুনা- সুন্দরবনের নিকটবর্তী এ পাঁচটি জেলা ছাড়াও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের কাঁকড়া ও কুঁচিয়া উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।

ফলে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। খরচ কমাতে অনেকে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। সবচেয়ে বিপদের মুখে পড়েছেন কাঁকড়া ও কুঁচিয়া খামারের হাজার হাজার শ্রমিক। তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের বিশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, কুঁচিয়া ও কাঁকড়া উৎপাদনের মৌসুম হচ্ছে এখন। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকেই রফতানি করতে না পারায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বছরে ১৭ হাজার মেট্রিক টন কুঁচিয়া ও কঁকড়া উৎপাদিত হয়। এর ৯০ শতাংশ রফতানি করা হয় চীনে আর বাকি ১০ শতাংশ রফতানি করা হয় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে। ডিসেম্বর থেকে চীনে রফতানি বন্ধ হওয়ার পর এখন বাকি দেশগুলোতেও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন।

এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিল্ড ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলসিএফইএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জানুয়ারি কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রফতানি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাজারে কোনো চাহিদা না থাকায় এগুলো এখন খামারি ও রফতানিকারকদের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হবে। তাতে বর্তমানে মজুদ থাকা কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০-৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বিএলসিএফইএর হিসাব অনুযায়ী, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আয় করে থাকে। যার ৯০ শতাংশ আসে চীন থেকে। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে চীনের বাজারে রফতানি বন্ধ রয়েছে।

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এ তিন মাস বেশি কাঁকড়া রফতানি হয়। আর তাই এ সময় বাড়তি বিনিয়োগের জন্য বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও বা সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন।সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ করে চীনে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।

মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচ জেলায় উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ভাগই চীনে রফতানি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ২৩ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি শীতের শেষে খামারগুলো পানি শূন্য হওয়ায় লবণাক্ততার পরিমাণ পাঁচ পিপিটির নিচে নেমে গেছে। তাই খামারে উৎপাদিত কাঁকড়া মরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় খামারিরা স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকার শিলা কাঁকড়া মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার খামারি চরম আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর