রফতানিমুখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজিবাজারর জন্য বিশেষ প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্যের দাবি করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শিল্প উৎপাদন, রফতানি বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান সেক্টরে ক্ষেত্রে ধস নেমেছে৷ পুঁজিবাজারে বিশ্বব্যাপী গত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে৷ আশা করা যাচ্ছে এতে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে৷
মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজার বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের বাইরে নয়৷ পুঁজিবাজারের স্বার্থে এই মুহূর্তে সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য খাতের মত প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্য দরকার। তাই ব্রোকার কমিউনিটি বা স্টেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য যারা আছেন, তাদেরকে স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে একটা আর্থিক সাহায্য বা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি৷ তবে যদি ভবিষ্যতে আয় রোজগার করে ভালো অবস্থা হলে, অবশ্যই সে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সহযোগিতা খুবই জরুরি প্রয়োজন। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে একটু স্বল্প সুদে সরকার এ মুহূর্তে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারে। দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটাও চিন্তা করতে হবে৷’
সরকারের কাছে আকুল আবেদন এবং প্রাণের দাবি জানিয়ে ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, ‘লেনদেনে দশমিক ০৫ অর্থাৎ ৫ পয়সা হারে যে অগ্রিম ইনকাম টেক্স (AIT) দিতে হয়, সেটা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ মওকুফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আর সর্বশেষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কথা ভাবতে বলব৷ তারাও খুব ক্ষতিগ্রস্ত। বাজার খোলার পর তাদের ব্যাপারেও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে৷’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার বিষয়টি আমাদের জন্য দুঃখজনক৷ আসলে এটার সঙ্গে আমরা পরিচিত না৷ এতদিন যাবত বাজারটি বন্ধ থাকা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং একটি খারাপ অভিজ্ঞতা৷ তবে বাস্তবতার দিকটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে আমাদের কিছুটা টেকনিক্যাল পার্থক্য আছে।’
ইমন বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের স্টক মার্কেট সম্পূর্ণ অটোমেটেড মার্কেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মভিত্তিক মার্কেট। সেখানে মোবাইল অ্যাপসগুলো অনেক কার্যকরী। যেমন সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ পুরো লেনদেন মোবাইলে হয়।সেখানে একটি ইন্টিগ্রেট সিস্টেম আছে এবং এক সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। এই সিস্টেমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিডিবিএল, সিসিবিএল সবাই সম্পৃক্ত৷ তবে আমাদের সত্ত্বাগুলো ভিন্ন৷ ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যদি বন্ধ থাকে, আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়৷ আবার সিডিবিএলও পাশাপাশি বন্ধ৷ ফলে ডিএসইকে চালু রাখাটা কিছুটা কষ্টকর বিষয়৷’
এদিকে, দেশের লকডাউন পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবসহ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া বা অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টাও প্রাধান্য পাবে বলে জানান তিনি৷
সরকার যদি ছুটি আরও বাড়ায়, সেক্ষেত্রে আমরা কি করব এমন প্রশ্ন রেখে মিনহাজ ইমন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ডিএসইর বোর্ডের সিদ্ধান্ত সরকারের ছুটি যদি বাড়ে, দুঃখজনক হলেও এটার বাস্তবতা আমাদের লেনদেনটা বন্ধ থাকবে। তবে কমিশন অফিস খোলা রাখে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷’
ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, ‘আমরা ব্রোকাররা অনেক খারাপ অবস্থায় আছি৷ ২০১৯ সাল থেকেই আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ লেনদেন কমায় আয় কমেছে৷ আমরা প্রত্যেকেই লোকসানে ব্যবসা করছি৷ আর এই করোনার কারণে আমাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ খারাপ৷ এপ্রিল মাসে আমাদের আয় হবে শূন্য৷ অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে৷’
এদিকে শেয়ারের দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) বেঁধে দেওয়ার কারণে লেনদেন এক ধরনের বন্ধ অবস্থায় আছে বলে জানান ইমন৷ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় অফিস খুললেও খুব একটা আয় রোজগার হবে না৷’