প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) রিটার্ন দাখিল করেছেন প্রায় ৩১ হাজার ব্যবসায়ী।
তাতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকারও বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের তথ্য মতে, শুধুমাত্র ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে সরকারি সাধারণ ছুটির সময়ে সীমিত আকারে ভ্যাট সার্কেল অফিসগুলো ১২ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা রাখে।
এ চার দিন খোলা ছিল দেশের ২৫২টি ভ্যাট সার্কেল। তাতে দেশে বর্তমানে ভ্যাট নিবন্ধিত এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট ৩০ হাজার ৭৮১টি রিটার্ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ম্যানুয়াল দাখিলপত্র ১০ হাজার ৯৯৫টি আর অনলাইনে দাখিলপত্র ১৯ হাজার ৭৮৬টি। সব মিলে চার দিনে ভ্যাট রিটার্ন বাবদ মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৮৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
১২টি কমিশনারেটের মধ্যে রাজস্ব আহরণে এগিয়ে এলটিইউ। এলটিইউতে চার দিনে মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ১২৬টি। আর রাজস্ব আহরণ হয়েছে চার হাজার ১৯৯ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এ চার দিন কোনো রকম জরিমানা ছাড়াই ব্যবসায়ীরা ভ্যাট জমা দেন। তবে করোনার মধ্যে ভ্যাট অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা জরিমানা ছাড়াই বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
কিন্তু এনবিআর বলছে, আইনি বাধ্যবাধকতা আর জরিমানা ছাড়াই এনবিআরের আওতাধীন এলটিইউসহ ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট এবং ২৫২টি ভ্যাট সার্কেল ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনের জন্য সীমিত আকারে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা হয়।
চার দিনের মধ্যে শেষ দিন বুধবার (১৫ এপ্রিল) মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬০টি। আর আহরিত রাজস্ব ৪ হাজার ৬০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এছাড়া তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৩টি। আর রাজস্ব আহরিত হয়েছে ২৮৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় দিন সোমবার (১৩ এপ্রিল) ভ্যাট রিটার্ন দাখিল হয় ৫ হাজার ১৩টি আর তাতে রাজস্ব আদায় হয় ১ হাজার ১৭০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
প্রথম দিন রোববার (১২ এপ্রিল) ৪ হাজার ২৫১টি ভ্যাট রিটার্ন দাখিল হয়। আর রাজস্ব আদায় হয় ৩৩৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, প্রতিটি সার্কেল অফিসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ কঠোরভাবে পালন করা হয়। এসময় প্রতিটি সার্কেলে কার্যক্রম চালানো হয় করোনা প্রতিরোধের সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে। বিশেষ করে কর্মকর্তারা পিপিই পরে রিটার্ন জমা নেন। আর প্রবেশের সময় করদাতাদের হাত ধোঁয়ার জন্য স্যানিটাইজার রাখা হয়। জনসমাগম এড়াতে রিটার্ন দাখিল শেষে দ্রুত অফিস ত্যাগ করতে বলা হয় সবাইকে।
এনবিআরের তথ্য মতে, সরকারি নির্দেশনার কারণে ২৫ মার্চ থেকে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু নতুন মূসক আইন অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
করদাতাদের জরিমানা এড়াতে ও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় এনবিআর শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ভ্যাট রিটার্নের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে। যাতে বলা হয়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।