নভেল করোনাভাইরাসে অর্থনীতিতে উদ্ভূত নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি হ্রাস করতে সদস্য দেশগুলোর সহায়তায় হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। এ জন্য এআইআইবি’র প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এআইআইবি’র প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে সদস্য দেশগুলোর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা অত্যন্ত সহায়ক হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি ক্রমবর্ধমান সহায়তা এবং স্বাস্থ্য খাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এআইআইবি বাংলদেশের জন্য যে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেজন্যও ধন্যবাদ জানান।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) এআইআইবি’র প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে টেলিকনফারেন্সে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
টেলিকনফারেন্সে আরও যুক্ত হন এআইআইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড ডি জে পানডিয়ান।
এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি নিঃসন্দেহে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রতিদিনই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যদি মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতি নিয়েও এখন থেকেই না ভাবা হয়, তাহলে ২০২১ সালেও অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হবে না। সদস্য দেশগুলো এক সাথে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
জিন লিকুন অর্থমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশে এআআিইবি’র চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে এআইআইবি’র সহায়তায় প্রায় ১.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাতটি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ২০২০ সালে অনুমোদিত হয়েছে তিনটি প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী ও এআইআইবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় জানানো হয় যে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ। এসব প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিষেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলোর সুরক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন এবং সঠিক সময়ে যথাযথ আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এ সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ায় আমরা অবশ্যই এআইআইবি’র প্রতি অবিরাম সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করছি। এ ক্রান্তিকালে এআইআইবি’র প্রতিশ্রুত সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল, কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের প্রয়োজন আরো অনেক বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এআইআইবি থেকে উন্নত প্রকল্প সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পর্যায়ক্রমে আগামী ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট দেওয়ারও অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেলে কৃষি খাতের অটোমেশন, কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফল ও শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, গবাদি পশু ও হাস-মুরগি পালন এবং মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের পুনর্বাসনের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এআইআইবি’র প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লিখিত খাতগুলোতে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন এবং পরে বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে জানাবেন বলে জানান। ফান্ডিং মডালিটিতে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান জিন লিকুন।