ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার উৎপাদনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিসিএল) ।
চট্টগ্রামের রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত বিসিআইসির অধিভুক্ত এ কারখানায় চলতি অর্থবছরে ডিএপি সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হাজার মেট্রিক টন। ৪ মে পর্যন্ত কারখানাটিতে ৬৪ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন ডিএপি সার উৎপাদন হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) দেশের একমাত্র ডিএপি সার উৎপাদনকারী কারখানা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ কারখানার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ছিল ৫০ হাজার মেট্রিকটন।
এ দু'বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও কারখানার প্রসেস ড্রাইয়ারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩৫ হাজার মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৪,০০২ মেট্রিকটন টন ডিএপি সার উৎপাদিত হয়। প্রয়োজনীয় মেরামত শেষে চলতি অর্থবছরের জন্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা, কারখানা ম্যানেজমেন্টের নিবিড় তদারকি এবং শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চলতি অর্থবছর নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭০ দিন আগেই ডিএপিসিএল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। বর্তমানে কারখানাটিতে পুরোদমে উৎপাদন চলছে।উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে কারখানাটিতে শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তা নির্বিশেষে সকলে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। চলতি বছর কারখানায় ডিএপি সার উৎপাদন ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।'
উল্লেখ্য, ডিএপি সার কৃষি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ। রবি জাতীয় শস্যসহ যে কোনো ধরনের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী। বর্তমানে দেশে ডিএপি সারের মোট চাহিদা প্রায় ৯ লাখ মেট্রিকটন। এর সিংহভাগই কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিএডিসির মাধ্যমে বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, যৌগিক সার হিসেবে দেশব্যাপী ডিএপি সারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেন এবং টিএসপি সারে ফসফরাস থাকলেও ডিএপি সারে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস দুই ধরনের উপাদানই বিদ্যমান। ফলে এটি একই সাথে শাকসবজি, রবিশস্য এবং ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বেশি কার্যকর । এ বিবেচনায় চাষীদের মধ্যে ডিএপি সার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার চাষিপর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাষিদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে সরকার সম্প্রতি ডিএপি সারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়েছে। আগে ডিলার পর্যায়ে প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম ছিল ২৩ হাজার টাকা। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ তা মেট্রিকটন প্রতি ১৪ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে দেশে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ছে।
ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন (এ্যামোনিয়া ফর্মে) এরং টিএসপি সারের সমপরিমানের ফসফেট (অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ P2o5) রয়েছে। ফলে এই সার প্রয়োগে ইউরিয়া ও টিএসপি উভয় সারের সুফল পাওয়া যায়। ফলে ইউরিয়া এবং টিএসপি সারের ব্যবহার হ্রাস পেয়ে অর্থ ও শ্রম উভয়ের সাশ্রয় হয়। ডিএপি সারের মূল্য হ্রাসের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
কৃষি উৎপাদনের আমদানি বিকল্প উপকরণ হিসেবে দেশেই ডিএপি সারের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এর ফলে একদিকে যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে দেশ সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিসিআইসির দিকনির্দেশনায় কারখানায় কর্মরত সকলে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।