দেশের রফতানি আয়ের শীর্ষখাত হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক শিল্প (গার্মেটন্স)। মহামারি করোনা মোকাবিলার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে এ খাতের অনেক উদ্যোক্তাই তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখছে। এতে প্রতিদিনই নতুন নতুন কর্মপদ্ধতি, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে তাদের। এজন্য নতুন বিনিয়োগ যেমন দরকার হচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তিও উপস্থাপন করতে হচ্ছে শিল্প কারখানায়।
মূলত, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মাফিক সরবারহ নিশ্চিত করা এবং নিজেদের ব্যবসা চালু রাখার জন্যই এত সব আয়োজন।
এই খাতের দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপ তাদের ত্রিশ হাজার পোশাক শিল্প শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখেই রফতানি পণ্য উৎপাদন করছে। এত সব আয়োজনের পরও প্রতিদিন প্রায় ১০০ শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে ১৯ জন কাজে অনুপস্থিত থাকছেন। অথচ প্রতিষ্ঠানটির ১০০ ভাগ সক্ষমতার মধ্যে বিদেশি পণ্যের অর্ডার হলো ১১৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান বলেন, ‘আমেরিকা, ল্যাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ১১৩ শতাংশ হারে উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মস্থলে উপস্থিত হতে না পারায় কিছুটা সংকট চলছে। এই করোনার সময় যারা সরাসরি ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করছে বিশেষ করে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, তাদের জন্য খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ছোট সাইজের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুবই খারাপ সময় এখন তারা কিভাবে বাঁচবে সে উপায় খুঁজে বের করতে হবে’।
কেডিএস গ্রুপে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। এই খাতে তাদের বার্ষিক লেনদেন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য শুরুতেই বেশ কয়েকটি বাস্তব সম্মত কর্মপদ্ধতি চালু করেছে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে কেডিএস গ্রুপ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্বয়ংক্রিয় মেশিন কিনেছে ৮টি। প্রতিটি মেশিন ২০ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতিদিন সকালে গার্মেন্টস কর্মীরা কারখানায় ঢোকার সময় স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করেন।এইসময় কারো শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি হলেই মেশিনে সংকেত দেয়। তখনই তাকে কারখানায় না ঢুকিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কারখানার ভেতরে কর্মরত শ্রমিকদের দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তখন কারো অসংগতি পেলেও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদন কর্মীসহ সকলের মাস্ক পড়া আবশ্যক করা হয়েছে। প্রত্যেকের কাজের এলাকা আলাদা করে পার্টিশন করে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন রকম সংক্রমণের শিকার না হন কেউ। এছাড়া প্রতিদিন কাজ শেষ কর্মীরা চলে যাওয়ার পর পুরো কারখানায় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে পরের দিনের কাজের জন্য উপযোগী করা হয়।
আজ থেকে শুরু হয়েছে ম্যানেজমেন্ট ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত নীতি নির্ধারণী পর্যাযের ১০০ জনের টেলিকনফারেন্স। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সংকটময় নতুন এ পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা কর্মচারিরা কিভাবে স্বাভাবিক কাজ কর্ম সচল ও অব্যাহত রাখবে তার উপায় খুঁজে বের করা। এই টেলিকনফারেন্স চলবে আরো কয়েকদিন। তারপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং চূড়ান্ত করা হবে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান বলেন, ‘প্রতিমাসে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে বেতন দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। একজন নতুন গার্মেন্টস কর্মীর ন্যূনতম বেতন ৯ হাজার টাকা হলেও পার্টটাইমসহ মাস শেষে তার বেতন দাঁড়ায় ১৩-১৪ হাজার টাকা। যারা কারখানা চালু রাখতে পারবে না, তাদের পক্ষ এই বিশাল ব্যয়ভার বহন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি আমাদের সকলেরই বিবেচনা করা উচিত।কারণ কোন কোম্পানি যদি একবারেই দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়বে’।