আসছে গতানুগতিক ধারার আরও বড় বাজেট

বাজেট, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 12:05:32

একদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধস নেমেছে। মধ্য আয় থেকে অন্তত ২ কোটি মানুষ নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। কর্ম ও সহযোগী না থাকায় সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ।

অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তার ওপর দেশ ও জনগণের ওপর ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। আর তাতে নতুন করে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতানুগতিক ধারায় আরও বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) তিনি 'অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা' ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি এ অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাজেট। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে বড়।

আর এটি ঘাটতি বাজেটেরও বড় বাজেট। ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থেকে বাড়িয়ে এবার ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে কর্মসংস্থানের কোনো রূপরেখা থাকছে না বাজেটে। তারপরও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, বরাবরের মতই বিশাল এ বাজেটের অর্থের জোগানের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে রাজস্ব আদায়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ থেকে।

এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের টার্গেট পূরণ করতে না পারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

মহামারি করোনা মোকাবিলার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হচ্ছে। পেনশন ও গ্র্যাচুইটিতে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি, সুদ বাবদ ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি, শেয়ার ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ বাবদ ২৭ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতেই বেশি বাজেট বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়গল (সিপিডি) বলেছিল, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলেছে, এ খাতের চলমান করোনার চিকিৎসার জন্যই ৪০ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন।

অথচ করোনার আক্রমণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টালমাটাল হলেও এ খাতে বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ানো হয়নি।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৩৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে মূল বাজেটে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা করা হয়।

করোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষা খাতের জন্য এবারের বাজেটে বিশেষ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গতবারের মতই সর্বোচ্চ বাজেট দেয়া হচ্ছে। বাজেটে ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৬ হাজার ২৭৪ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি।

অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে সরকার ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া কৃষি খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বেড়ে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। জ্বালানি খাতে বরাদ্দে বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। মাত্র ৭০৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আগামী বাজেটে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে ৫৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে থাকছে ৩৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ২৮ হাজার ৬৮৮ কোটি এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ থাকছে এক লাখ ৮০ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৮৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর