বাজেট বাস্তবায়ন খুবই দুরূহ হবে: বিল্ড

বাজেট, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 03:14:40

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য খুবই দুরূহ হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)।

শুক্রবার (১২ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ অভিমত প্রকাশ করে সংস্থাটি।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিল্ড বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদানে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ‘কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ ও একটি সুপরিকল্পিত এক্সিট পলিসি নিয়ে হাজির হতে হবে। অন্যথায় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং এলডিসি থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে।

এবারের বাজেটে সরকারের পরিকল্পনার চারটি মূল খাত হলো: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও কর্মসংস্থান; যেগুলো খুবই সুচিন্তিতভাবে বাছাই করা হয়েছে। এই খাতগুলোর জন্য ঘোষিত নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রাক্কলিত বাজেটের সঠিক ব্যয় অতীব প্রয়োজন। প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং সফলতা ধরে রাখতে বাজেট ব্যবস্থাপনায় থাকতে হবে নৈতিকতা এবং বাস্তবমুখিতা।

প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়, সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু প্রশংসনীয় নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি, কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর হ্রাস, রাজস্ব করের সীমা বৃদ্ধি, রাজস্ব করহার হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, সিগারেট ও মোবাইল কল রেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং পিপিইসহ অন্যান্য মেডিকেল পণ্যের জন্য শুল্ক হ্রাস। যেসব প্রস্তুতকারক পিপিই, সার্জিক্যাল মাস্ক ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য পণ্য রফতানিতে আগ্রহী তাদের জন্য সরকারকে বিশেষ সহায়তার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। রফতানি বৈচিত্র্যকরণের একটি বিশেষ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

বিল্ডের প্রতিক্রিয়া বলা হয়েছে, ঘোষিত বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩.৩০ ট্রিলিয়ন টাকা, যা কিনা আগের বছরের তুলনায় ১.৩৫ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯.৮ শতাংশ বেশি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা উচ্চাভিলাষী। ব্যবসায় পরিচালনার (ডুয়িং বিজনেস) জটিলতা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআর অটোমেশনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে অনলাইন কার্যক্রম সর্বত্র জনপ্রিয় হচ্ছে জনসাধারণও এতে অভ্যস্ত হচ্ছে। ডেটা ফ্লোর জন্য নীতিমালা, ডেটা লোকালাইজেশনের শর্তাবলী, অনলাইন প্লাটফর্ম এবং এপভিত্তিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। এছাড়া আর্থিক খাতে ই-পেমেন্ট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নগদ অর্থ লেনদেনকে অনুৎসাহিত করতে হবে। ফাস্ট ট্র্যাক ডিজিটালাইজেশনের জন্য সরকারকে একটি কর্মপরিকল্পণা প্রণয়ন করতে হবে।

প্রাক্কলিত বাাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৬ শতাংশ বা ১.৮৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে দেশীয় ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১.০৯ ট্রিলিয়ন টাকা এবং বিদেশি ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬০ বিলিয়ন টাকা। ব্যাংক খাত থেকে বিশাল অংকের ঘাটতি অর্থায়ন বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বর্তমানে গভীর সংকটে রয়েছে বেসরকারি খাত। কোভিড-১৯ সংকট এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিশাল অংকের ঘাটতি অর্থায়নের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে সরকারকে একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

প্রতিক্রিয়ায় বিল্ড আরও বলেছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯,২৪৭ কোটি টাকা, যা কিনা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ২৩.৪৪% বেশি। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯,৯৮৩ কোটি, যা কিনা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ১১% বেশি। সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘হেলথ সেক্টর ম্যানেজমেন্ট পলিসি’ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তহবিল প্রস্তাব করতে হবে। অ্যাগ্রো-প্রসেসিং খাতকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

সরকার এরই মধ্যে ৩০,০০০ কোটি টাকা ছাপার নির্দেশ দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মূদ্রাস্ফীতির হার ৫.৬% এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা করা হয়েছে ৫.৪ শতাংশ। যদি টাকা ছাপার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন না বাড়ে তবে এ থেকে মূদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো সামগ্রিক চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি। সরকারকে তেলের নিম্ন দর, অগ্রাধিকার-বহির্ভূত এডিপি প্রকল্প বাতিল এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সিএমএসএমই খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারকে সঠিক নীতি সহায়তা প্রদান করতে হবে। এ খাতের জন্য বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পিএকএসএফের মাধ্যমে এ অর্থ সরবরাহ করা হবে।

কটেজ ও সাইক্রো উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ক্ষুদ্রঋণের অন্যান্য সংস্থাগুলোকে বিশেষভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এসব উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব সহায়তা প্রয়োজন সেগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এসব উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের অন্তত দুই লাখ টাকা করে কোলেটারাল-মুক্ত ঋণসহায়তা দিতে হবে। ভারত এরইমধ্যে এসব উদ্যোক্তার জন্য কোলেটারাল-মুক্ত তিন লাখ টাকা ঋণসহায়তা প্রদান শুরু করেছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুপারিশ করেছে বিল্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর