ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা ৩০০ কোটি টাকা!

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 18:23:49

ঢাকা: ট্যানারি মালিকদের কাছে বর্তমানে দেশের পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা তিনশো কোটি টাকা। আর এই টাকা পরিশোধ না করায়ই চামড়া কিনতে পারছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। যার ফলে তৃণমূল চামড়া সংগ্রহকারীদের লোকসানের খাতার অংক বাড়ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ীরা।

রংপুরের তৃণমূল পর্যায়ের চামড়া সংগ্রহকারী আবেদ মিয়া জানান, তিনি চারটি গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন প্রায় আড়াই হাজার টাকা লোকসানে। কারণ জেলা পর্যায়ের পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে কম দামে বিক্রি না করলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই কেনা দামের থেকে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে তৃণমূলের চামড়া সংগ্রহকারীদের। অন্য কোনো বছরই এমনটি হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।

অন্যদিকে চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এজন্য দায়ি করছেন ট্যানারি মালিকদের। পোস্তগোলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৭ সালের কোরবানি ঈদে সংগৃহীত চামড়া বিক্রির সময় যে টাকা ধারে দিয়েছিলো ট্যানারি মালিকদের সেই টাকাই এখনো পরিশোধ করেনি তারা। ফলে অর্থ সঙ্কটে ভুগছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর তাই ইচ্ছা থাকলেও চামড়া কিনতে পারছেন না পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুরো দেশের চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীদের ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। যার মধ্যে শুধু ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এই টাকা গত এক বছর ধরে পাওনা থাকলেও পরিশোধ করছেন না ট্যানারি মালিকরা। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়াত্ত চার ব্যাংক সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ পেলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি ট্যানারীগুলো।

বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজি দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা চামড়া কিনতে পারলে তাতো আমাদেরই লাভ। বছরের চামড়ার চাহিদার ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশই আমরা সংগ্রহ করি এই কোরবানি ঈদের পশু থেকেই। কিন্তু এবার আমরা চাইলেও চামড়া কিনতে পারছি না। কারণ আমাদের শিল্পের ৩০০ কোটি টাকা পড়ে আছে ট্যানারী মালিকদের কাছে। সরকার চামড়া কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দিলেও ট্যানারী মালিকরা আমাদের অর্থ পরিশোধ করেনি।

অন্যদিকে চারটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ মাত্র ৪১টি ট্যানারীকে দেওয়া হলেও চামড়া শিল্পে মোট ট্যানারীর সংখ্যা ৮৫৫টি। আর তাই অনেক মালিক চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেননি বলে জানান করেছেন বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের বর্তমানে ট্যানারির সংখ্যা ৮৫৫ টি। আর যেই ছয়শ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে তার সংখ্যা ৪১টি। ছোট ও মাঝারী যেসব ট্যানারী সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে তারা কিন্তু ঋণ পায়নি। অন্যদিকে কারখানা  স্থানান্তরের জন্য ছোট ও মাঝারী ট্যানারিগুলোর বড় অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাই তাদের হাতও খালি। ফলে অনেকেই অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। আর যে ছয়শ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে তারও বেশির ভাগই করা হয়েছে পুন:তফসিলিকরণের মাধ্যমে। এতে ট্যানারি মালিকদের হাতে ঋণের সব টাকা কিন্তু সরাসরি আসেনি। বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর