শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভি বিবেচনায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষ-৫ এ ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এমনকি তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (বিএটিবিসি), বার্জার পেইন্টস, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, রেকিট বেনকিজার ও গ্রামীণফোনের চেয়েও ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি এনএভি বেশি। এছাড়া শেয়ার প্রতি মুনাফা বা ইপিএস বিবেচনায় তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটন দ্বিতীয় অবস্থানে।
শুধু তাই নয়; দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস (শেয়ার প্রতি মুনাফা) নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন হাই-টেক। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ইপিএস বিবেচনায় শীর্ষ ৮-এ রয়েছে ওয়ালটন। এক্ষেত্রেও বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস ও গ্রামীণফোনের চেয়েও ওয়ালটনের ইপিএস বেশি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গত অর্থবছরের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, লিব্রা ইনফিউশনের এনএভি’র শীর্ষে রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি এনএভি ১ হাজার ৫৯৩ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে বাটা সু’র এনএভি ৩৪৭.১১ টাকা, তৃতীয় লিনডে বিডি’র এনএভি ৩৩৫.৭০ টাকা, চতুর্থ স্থানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এনএভি ২৪৯.৮৩ টাকা। এরপরেই রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথে থাকা ওয়ালটন হাই-টেকের এনএভি ২৪৩.১৬ টাকা। এছাড়া, এনএভি ২৩০.৯০ টাকা নিয়ে ৬ষ্ঠ স্থানে রেনেটা, ৭ নম্বরে থাকা সোনালী আঁশের এনএভি ২২৫.৯১ টাকা, ৮-এ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর এনএভি ১৯৮.৮৫ টাকা, ৯-এ এসিআই’র এনএভি ১৯৬.৫৯ টাকা এবং ১০-এ রয়েছে ইস্টার্ন ল্যুব্রিকেন্টের এনএভি ১৮২.৭৬ টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এনএভি বিবেচনায় তালিকাভুক্তির শুরুতে আইপিও বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারবেন। কেননা বাজারে ওয়ালটনের সমান ও বেশি এনএভি থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৯৩.২০ টাকা শেয়ার দরে রয়েছে বাটা সু। অথচ ওয়ালটনের শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন মাত্র ২৫২ টাকায়। সেই বিবেচনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন।
আর্থিকখাতের বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এনএভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। যে কোনো কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা কতটা শক্তিশালী তা এনএভি দেখে বোঝা যায়।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব পার্থ প্রতিম দাশ বলেন, যেসব কোম্পানির নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভি বেশি থাকে, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ভালো ক্যাপিটাল ও ডিভিডেন্ড গেইন করার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। সেই হিসেবে এনএভি ও ইসিএস বিবেচনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ওয়ালটন। তার প্রত্যাশা- ওয়ালটনে বিনিয়োগ করে একদিকে কাঙ্ক্ষিত ক্যাপিটাল ও ডিভিডেন্ড গেইন করতে সক্ষম হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, ওয়ালটনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও গভীরতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ওয়ালটনের তালিকাভুক্তি উদাহারণ হিসেবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী করে তুলবে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সম্পদ মূল্য বিবেচনায় ওয়ালটন আর্থিকভাবে অনেক শক্তিশালী একটি কোম্পানি। একইসঙ্গে তাদের ইপিএসও খুব ভালো। পুঁজিবাজারে ওয়ালটনের মতো আরও মানসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবে।
সূত্র মতে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল উত্তোলন করবে ওয়ালটন হাই-টেক। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত তহবিল ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও পরিচালনা খাতে ব্যয় হবে।
এর আগে দেশে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে গত ২ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়ালটনের নিলাম (বিডিং) শেষ কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩১৫ টাকা। আইন অনুসারে, কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে (ডিসকাউন্ট) আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর বিধান থাকলেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ২০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকায় ইস্যু করবে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
২৩ জুন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭২৯তম নিয়মিত সভায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বিডিং এ ওয়ালটন শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ৩১৫ টাকায় নির্ধারিত হয়।