গৃহ ঋণ নেওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নেই কর্মচারীদের

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:19:32

গৃহ ঋণ ওয়ার্কিং কমিটির সভা মঙ্গলবার

ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণের ওয়ার্কিং কমিটি মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) প্রথম সভা হওয়ার কথা থাকলেও কর্মচারীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন এ ঋণ গ্রহণের আর্থিক ক্ষমতা তাদের নেই।

তারা বলছেন, মাসিক বেতন থেকে ঋণের কিস্তি দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় । আর কিস্তি প্রদান করলে সারা মাস জুড়ে না খেয়ে থাকতে হবে । মোট ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ কর্মচারী ।

আগস্ট মাসের ১২ তারিখে অর্থ মন্ত্রনালয়ের ব্যাংকের মাধ্যমে গৃহ ঋণ নেয়া সংক্রান্ত এক বৈঠকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে নয় সদস্যর ওয়ার্ক কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটি আগামী ৩১ আগস্ট মধ্যে ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ও ঋণ কার্ষক্রম পরিচালনা পদ্ধতি বিষয়ে অর্থবিভাগের সচিবের  কাছে সুপারিশসহ একটা প্রতিবেদন জমা দেবে ।

চলতি  অর্থ বছরের শুরু থেকে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গত জুলাই জারিও হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রনালয় সূত্র জানিয়েছে, ঋণের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ ঋণ এখনই পাওয়া যাচ্ছে না ।

অন্যদিকে বেশিভাগ সরকারি কর্মচারীরা এ ঋণ গ্রহণের আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা বলছেন যাদের বেতন বেশি বিশেষ করে কর্মকর্তারা এ ঋণ নিতে পারে আমরা এ ঋণ নিয়ে কোন ভাবেই লাভবান হবো না ।

১০তম গ্রেডের কর্মচারী নজরুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত গৃহ ঋণ নীতিমালা ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হলে প্রতি মাসে বেতন বাকি থাকে ৭৮৬৬.৮০ টাকা ।

অন্যদিকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী প্রস্তাবিত গৃহ ঋণ নীতিমালা আওতা সর্বো নিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রতিমাসে তাকে ১৩ হাজার ৩৩৫ টাকা  ঋণের কিস্তি দিলে  প্রতি মাসে বেতনের অবশিষ্ট থাকবে ২৬৮১ টাকা ।

আর ১০ গ্রেডের কর্মচারী ৫৫ হাজার  টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে তাকে দিতে হবে ৩৬.৮৩৮ টাকা  ফলে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৩,১৩২.৫৪ টাকা ঋণ করে এ কিস্তির টাকা দিবে ।

কর্মচারীরা বলছেন , কর্মকর্তারা যারা ইতিমধ্যেই গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পেয়েছে এবং  প্রতি মাসে গাড়ি পরিচর্যা ও ডাইভারে বেতন দিতে ৪০ হাজার টাকা পায় তারাই গৃহ ঋণের এ খরচ বহন করতে পারবে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মচারী যদি প্রতি মাসে যদি  ঋণের কিস্তির অর্থ না দিতে পারে তা হলে অবসরকালীন ভাতার থেকে তা কেটে নেয়া যেতে পারে ।  

অর্থ মন্ত্রনালয়ের সূত্র জানায় সরকার এ ঋণ কার্যক্রমে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকগুলো। সঙ্গে থাকবে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। এ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অর্থ মন্ত্রনালয়ের এক সেল এ বিষয়টি পরিচালনা করবে। সেল কর্তৃপক্ষ ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করবে। সম্পূর্ণ অটোমেশন (অনলাইন) ভিত্তিতে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনলাইনে উন্নীত করতে হবে। এসব কাজ সম্পূর্ণ করতে অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে ।

সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে - সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক,  জনতা ব্যাংক, রুপালী এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন। এ ঋণে সরল সুদহার হবে ১০ শতাংশ । ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ দেবে সরকার, বাকি ৫ শতাংশ বহন করবে ঋণগ্রহীতা। এজন্য কোন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ঋণ নেয়ার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে ।

অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা’র প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর