ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের খাম খেয়ালিপনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এটিএম কার্ড গ্রাহকরা। প্রায় চারমাস ধরে আমদানিকৃত প্লাস্টিক কার্ড ছাড় না করায় দেশের ব্যাংকগুলো নতুন কোনো কার্ড ইস্যু করতে পারছে না। এটিএম কার্ড না থাকায় অনেককেই না চাইলেও ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে চেক দিয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে। অনলাইনে কেনাকাটা করলেও পেমেন্ট করতে হচ্ছে নগদ টাকায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসজাদ হোসেন শিকদার একটি বেসরকারি ব্যাংকে ডেবিট কার্ডের আবেদন করেছিলেন এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে। তিনমাস পার হয়ে গেলেও ব্যাংক তাকে কার্ড দিতে পারেনি। ব্যাংকের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার পরে আসজাদ হোসেনকে জানানো হয় তাদের কাছে প্লাস্টিক না থাকায় কার্ড ইস্যু করতে পারছে না।
আলাউদ্দিন আহমেদ নামের আরেক চাকরিজীবীর কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে জুন মাসের শুরুতে। মে মাসের শেষের দিকে বিষয়টি তিনি ব্যাংককে জানিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে এসেছেন। একমাস পার হয়েছে তার কার্ড দিতে পারেনি আরেকটি বেসরকারি ব্যাংক। কার্ড না থাকার কারণে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে চেক দিয়ে টাকা তোলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে জানান আলাউদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক এটিএম কার্ডের চাহিদা রয়েছে গড়ে ১০ লাখ। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ল্ড লিমিটেড, আহমেদ মুস্তাক এন্টার প্রাইজ, বাংলাদেশের আইটিসিএল, কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেড, লার্ক লিমিটেডসহ ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান ভিসা-মাস্টার, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডাইনার্স ক্লাব, জেসিবি মোনার্ক, চায়না ইউনিপে কার্ড আমদানি করে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করে।
এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে প্লাস্টিক না থাকায় গ্রাহকের চাহিদামত কার্ড সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আমদানিকারকরা ব্যাংকগুলোতে কার্ড সরবরাহ করতেও পারছে না।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ৪০ মার্কিন সেন্ট দামে একটি প্লাস্টিক কার্ড আমদানি করা হয়। কিন্তু কাস্টমস এসব কার্ডের আমদানি মূল্য ধরতে চায় ৭০ থেকে ৭৬ সেন্ট। আমদানি মূল্যের সঙ্গে রয়েছে ৭৫ শতাংশ ট্যাক্স। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানির প্রকৃত ইনভয়েস থাকা সত্ত্বেও কার্ডের দাম ৭০ থেকে ৭৫ সেন্ট ধরে ট্যারিফ আদায় করতে চায়। আমরা এত দাম দিয়ে কার্ড করলেও ব্যাংকগুলো আমাদের চুক্তির বাইরে টাকা দিবে না। চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকগুলো কার্ডের দাম ধরবে। এ কারণে আমরা কার্ডগুলো ছাড় করাতে পারছি না। ফলে ব্যাংকগুলোতে প্লাস্টিক কার্ডের সংকট দেখা দিয়েছে।
কয়েকজন কার্ড আমদানিকারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উম্মে নাহিদা আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার-২ কাজী তাওহিদা আক্তার ইচ্ছাকৃত ভাবে এসব কার্ড আটকে রেখেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কার্ডের অতিরিক্ত দাম ধরে ট্যাক্স আদায় করতে চান।
আমদানিকারকরা জানান, ভারত, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে প্লাস্টিক কার্ড আমদানির জন্য কোনো ট্যাক্স নাই। এই ট্যাক্স শুধু বাংলাদেশেই। সরকার বার বার ডিজিটাল দেশ গড়ার কথা বললেও কার্ড আমদানির ট্যাক্স তা বাধাগ্রস্ত করছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস’র কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমদানিকৃত এটিএম কার্ড বিমানবন্দরে আটকে থাকলে দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা করা হবে। কোনো কর্মকর্তা যদি এসব কার্ড ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে রাখেন খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।