পাবনা-৩: আ.লীগ-বিএনপি উভয় দলে কোন্দল-গ্রুপিং

বিবিধ, নির্বাচন

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 17:58:50

আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই ডজন প্রার্থী পাবনা-৩ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে রয়েছে। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা তাদের ছবি সংবলিত পোস্টার-বিল বোর্ড দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন নির্বাচনী এলাকা। এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ চাইছে আসনটি ধরে রাখতে। আর বিএনপি চায় তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখের অধিক। তাই এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংখ্যাও অনেক। পাবনার ৫টি আসনের মধ্যে এই আসনেই সবচেয়ে বেশি প্রচার-প্রচারণা চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় দুই ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী তৃণমূল নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে পরিচিতি ও কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তবে প্রচার-প্রচারণায় সব থেকে বেশি এগিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন এলাকা ও গ্রাম-গঞ্জে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন।

তথ্য মতে, ১৯৯১ সালে বিএনপির বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সাইফুল আযম আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজি উদ্দিন খান নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। সেসময় বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী কে এম আনোয়ারুল ইসলাম জয়ী হন। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মকবুল হোসেন। আগেরবার হেরে ২০০৮ সালে জয়ের মুখ দেখেন জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা মকবুল হোসেন। এ সময় বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাইফুল আযম। ২০১৪ সালেও জয়ী হন মকবুল হোসেন। তবে বিএনপি জোটের বর্জন করা ওই নির্বাচনে ভোট নিয়ে প্রতিপক্ষের ছিল নানা অভিযোগ।

বর্তমান সাংসদ মকবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে দলীয় নেতাকর্মীদের। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ তিনি কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। গত পৌরসভা নির্বাচনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজের ছেলেকে প্রার্থী করেছেন। এ আসনের অন্য উপজেলা ও পৌরসভার নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এছাড়া নানা কারণে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। ফলে তার বিরোধী ও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

এ আসন থেকে আবারো প্রার্থী হতে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি মকবুল হোসেন। এছাড়া নৌকার মাঝি হতে জোর প্রচার চালাচ্ছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসএম হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিকুর রহমান আতিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন, চাটমোহর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো, পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট শাহ আলম, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক ভিপি আবুল কালাম আজাদ, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আশরাফুল কবীর, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ।

অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিকূল রাজনৈতিক অবস্থায় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন। হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ থাকলেও ক্ষমতাসীনদের হয়রানিতে মাঠে প্রচার চালাতে পারছে না বলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অভিযোগ। তবে বিএনপির তালিকাতেও আছে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী।

ধানের শীষের প্রার্থী হতে কেন্দ্রে তদবির চালাচ্ছেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক এমপি ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান সাইফুল আযম।

তবে সাইফুল আযম তার নিজ এলাকা ফরিদপুরে থাকেন না। তার সঙ্গে এলাকার লোকজনের যোগাযোগ একেবারেই নেই। সাইফুল ১৯৯১ এবং আনোয়ারুল ২০০১ সালে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। তাই এলাকার মানুষ নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় রয়েছে বলে দাবি নেতাকর্মীদের।

এছাড়া প্রার্থী হতে চান জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি হাসানুল ইসলাম রাজা, তার ভাই চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম হীরা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, পাবনা বারের সাবেক সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাবিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বকুল।

এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই রয়েছে কোন্দল ও গ্রুপিং। দীর্ঘদিন ধরে এই কোন্দল চলে আসলেও কেন্দ্র কিংবা জেলা থেকে তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে দিন দিন বেড়েছে কোন্দলের ব্যাপকতা। তাই যে দল দ্রুত কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী ঘোষণা দিতে পারবে জয় তাদের পক্ষে ততটাই সহজ হবে বলে মনে করছে নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর