বরিশাল-২: আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি!

বিবিধ, নির্বাচন

সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 09:03:59

বরিশালের সন্ধ্যা নদীর তীরে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা মিলে গঠিত বরিশাল-২ আসন। উজিরপুরের হারতার শাপলা বিলের জন্য বর্তমানে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত এই দুই উপজেলা। তাই এখানে যেমন খ্যাতি রয়েছে, তেমনি জেলার অন্যসব সংসদীয় আসনের মধ্যে সর্বাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর তৎপরতায় আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বরিশাল-২ আসন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক। মনোনয়ন দৌড়ে বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ছাড়াও রয়েছেন সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহে আলম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক বানারীপাড়া পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল ও বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন।

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বার্তা২৪.কমকে জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আবারো তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়ে তালুকদার ইউনুস জানান, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল এবং বর্তমানে এ দলটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে আশা করেন তিনি।

এদিকে এবার বরিশাল-২ আসনে ভাগ বসাতে চাইছে ১৪ দলের শরিক দল বাংলাদেশ জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি এবং জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী।

অপরদিকে বরিশাল-২ আসনে রয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলটির বানারীপাড়া উপজেলায় রয়েছে আলাদা দুটি কার্যালয়। এতেই দলটির কোন্দল পুরো স্পষ্ট। উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে ঘিরেই এই দ্বন্দ্ব। তবে জেলা বিএনপির সমর্থনের ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তাছাড়া ২০০১ সালে এই আসনে নির্বাচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মনোনয়ন চাইলে হিসেব অন্য রকম হতে পারে। এছাড়াও দলের টিকিট নেয়ার চেষ্টায় আছেন সাবেক হুইপ ও সংস্কার পন্থী নেতা সৈয়দ শহীদুল হক জামালও।

বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা গোলাম মাহমুদ মাহবুব মাস্টার বার্তা২৪.কমকে জানান, সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ভাইয়ের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে দলে একটা বিভেদ তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তারা পদবঞ্চিত হয়েছে। এখানে গ্রুপিং বিদ্যমান।

এছাড়া রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীও। ইতোমধ্যে দলটির যুব সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নেছার উদ্দিনের নাম বরিশাল-২ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বরিশাল-২ আসনের নির্বাচনী পরিসংখ্যান মতে, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারানত বাইনকে পরাজিত করে এমপি হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম ফারুক অভি বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে পরাজিত করে এমপি হন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে এমপি হন বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুকে পরাজিত করে এমপি হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মনিরুল ইসলাম মনি। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দুর্বল এক প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুইটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসনে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৩৯৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৮ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯ জন। এছাড়াও এই আসনটিতে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৬টি।

উল্লেখ্য, ৩৯১ দশমিক ৯১ বর্গ কিলোমিটারের এই দুই উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮৮০ জন। এছাড়াও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪ জন। এই আসনে ভোটার বেড়েছে ৪২ হাজার ৩৪০ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর