খুলনা-১: ঝোপ বুঝে কোপ মারবে বিএনপি

বিবিধ, নির্বাচন

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-16 03:51:28

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে খুলনা জেলা। অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে এ জেলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৪ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৬৪ বর্গ কিলোমিটারের খুলনা জেলায় মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৩৭ জন। এ জেলায় রয়েছে ৬টি সংসদীয় আসন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিটি জেলায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন। এছাড়াও গণসংযোগ করে প্রচারণা শুরু করেছেন।

জানা গেছে, সুন্দরবনের উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ ও শহর লাগোয়া বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসন গঠিত। জাতীয় সংসদের ৯৯নং আসন এটি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে এ আসন থেকে নৌকার টিকিট পেতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত নেতাকর্মীরা।

এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় দ্বন্দ্বে এ আসনটি নিজেদের করে নিতে সুযোগ খুঁজছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কোন্দলে সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপি। আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিপরীতে বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছে। বলা যায়, বিএনপি এ আসনে ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে।

এ আসনে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে একজন দলীয় প্রার্থী হয়ে, অন্যজন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন। এরশাদের শাসনামলের পর থেকে খুলনার ছয় আসনের পাঁচটিতে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। তবে খুলনা-১ আসনটি ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগের হাতেই রয়েছে।

তবে স্থানীয়দের মতামত, বর্তমানে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক নেই। তাই এ আসন থেকে দলীয় একক প্রার্থী দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এবার বিএনপির কাছে হারতে পারে আওয়ামী লীগ।

খুলনা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট পেতে ৬ জন প্রার্থী জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা হলেন- খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দু’বারের সাবেক এমপি শেখ হারুনুর রশীদ, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উপদেষ্টা শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল।

আওয়ামী লীগের কোন্দল রোধ করতে না পারলে নিশ্চিত এ আসন রক্ষায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই নির্বাচন করতে পারেন এমন আলোচনাও রয়েছে দলের ঊর্ধ্বতন মহলে।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শুধুমাত্র একজন। বর্তমানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান আগেও দু’বার এ আসন থেকে নির্বাচন করেছেন, তার ওপরই ভরসা রাখছে বিএনপি।

এছাড়া এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন দলের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ এবং সিপিবির হয়ে খুলনা-১ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এম এম রুহুল আমিন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, খুলনা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৩২৪ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ২১৩ জন।

উল্লেখ্য, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল যাচাই করে দেখা যায় এ আসনে মোট ভোটের ৪৭ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া এ এলাকায় প্রতি নির্বাচনেই সিপিবি, জাকের পার্টি, ইসলামী জাতীয় ঐক্যসহ কয়েকটি ক্ষুদ্র দল অংশ নিলেও উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর