সিলেটের চার অর্থনীতিবিদ হতে চান নৌকার মাঝি

বিবিধ, নির্বাচন

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 02:12:56

সিলেটে নিজ নিজ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান চার অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন-বর্তমান সংসদ সদস্য, অর্থ ও পকিল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, রুপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবীর, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ড. আবদুল মোমেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন।

জানা গেছে,  শনিবার (১০ নভেম্বর) সিলেট-৫ আসন (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) থেকে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন আহমদ আল কবীর।  ৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন নিয়েছেন এমএ মান্নান ও  সিলেট-১ আসনের নিয়েছেন  আবদুল মোমেন এবং আগামীকাল রোববার দলের মনোনয়ন কিনবেন হবিগঞ্জ-৪ ফরাস উদ্দিন।

এমএ মান্নান

সরকারের সাবেক সচিব মান্নান আমলা হিসেবে ছিলেন খ্যাতিমান। তিনি ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নির্বাচনী এলাকা জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে আবারও তিনি এমপি হতে চান। তার আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডনও মনোনয়ন নিয়েছেন। তবে তাকে শক্তিশালী প্রার্থী বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরবর্তী অর্থমন্ত্রী মান্নান হতে পারেন বলে মনে করছেন।

মান্নান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে তদানীন্তন সিএসপি ক্যাডারে যোগদান করেন এবং জেলা প্রশাসক কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক এবং এনজিও ব্যুরোতে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইকোনমিক মিনিস্টার হিসেবে জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৩ সালে সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এম এ মান্নান ২০০৫ সালে  আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

আহমদ আল কবীর

ড. আহমদ আল কবীর একাধারে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, মিডিয়া ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্যও তিনি। ভূমিকা রেখেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ইউএসএআইডি, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউএনএফপিএসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন তিনি।

মনোনয়নপত্র সংহের পর তিনি জানান, জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজনৈতিক কাজ করছেন। স্থানীয়ভাবে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশে নিয়মিত উপস্থিত থেকেছেন। স্বাস্থ্যখাতে এককভাবে সবচেয়ে বড় এনজিও সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। যেটা শুরু হয়েছিল তার নির্বাচনী আসন জকিগঞ্জ থেকে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়নের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তারা তাকে সমর্থনও দিয়েছেন। জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিষয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭টি দেশে বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বাংলাদেশে শহর এলাকায় ‘সূর্যের হাসি’ কার্যক্রমের প্রধান হিসাবে ইউএসএআইডি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

২০০২ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল’র প্রধান হিসাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এশিয়া অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া ২০০৯ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আবদুল মোমেন

কূটনীতিতে প্রৌঢ় ও অর্থনীতিবীদ ড. এ কে আবদুল মোমেন গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন। অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই হওয়ায় এখন সিলেট-১ আসনে ভোটারদের কাছে চেনা মুখ তিনি। ব্যক্তিগত ইমেজ আর সুদক্ষ কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের কল্যাণ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। রাজনীতির জঠিল সমীকরণে নয়, আধুনিক উন্নয়ন চিন্তাভাবনায় নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশার সঙ্গে তার ভাবনার মেলবন্ধন ঘটাতে চান জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন। দীর্ঘদিন সরকারের কোনো পদে না থাকলেও উন্নয়ন ভাবনা এবং ব্যাংকিং সেক্টরসহ সেবাখাতের সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি ভাবেন।

জানা গেছে, আবদুল মোমেন ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত বোস্টনের ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি (রাষ্ট্রদূত) হিসেবে যোগ দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছিলেন। এরপর পড়ালেখা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রেরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায়। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে। শিক্ষকতা শুরু করেন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আমেরিকায় অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে একটি যৌথ প্রকল্পে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে বোস্টনের ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন।

ড. ফরাস উদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ম গভর্নর ও বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ছিলেন ড. ফরাস উদ্দিন। (হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে নির্বচন করতে রোববার সকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনবেন তিনি। তিনি ১৯৯৮-২০০১ সাল পর্যন্ত গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট। শিক্ষাগত, প্রশাসনিক, ব্যাংকিং ও অর্থ ব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজ নৈপুণ্যের অপূর্ব স্মারক তার বর্ণাঢ্য জীবন।

ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল ও ঢাকা সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএসহ বিভিন্ন জায়গায় তার প্রায় ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৭৩-৭৫ সময়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে কাজ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর