সেই সাজু এবার আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 17:17:13

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তালিকাভুক্ত রাজাকার মোজাম্মেল হোসেনের (মাজু) নামে একটি ব্রিজ উদ্বোধন করে এলাকায় বিতর্কিত হন আওয়ামী লীগ নেতা, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তিনি।

ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র ক্রয় করে জমা দিয়েছেন সাজু। তাই বিতর্কিত এই আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে এলাকায় চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সরকারি জায়গা দখল, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, দুই জায়গা থেকে সরকারি বেতন উত্তোলন, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, ইতিহাস বিকৃতি করে বই লেখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও এবার ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে সমগ্র দেশবাসী শোক পালন করলেও তিনি ব্যস্ত ছিলেন মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান সিএনজিসহ রোড শো নিয়ে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিলেন এমন রাজাকারদের তালিকা তৈরি করেছে আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এই তালিকায় আশুগঞ্জ উপজেলার ২৭ জন রাজাকারের নাম রয়েছে। তালিকায় সাজুর আপন চাচা বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মৃত আলী আমজাদ মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন মাজু মিয়ার নাম রয়েছে ২২ নাম্বারে। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও রাজাকার মোজাম্মেল হোসেনের নামে উপজেলার বৈকুণ্ঠপুরের সেক্কল মিয়ার বাড়ির সামনে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত একটি ব্রিজের উদ্বোধন করেন সাজু।

এই নিয়ে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে এলাকাবাসীর পক্ষে ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আশুগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক হাজী মো. মোবারক আলী চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ব্রিজের নাম ফলকটি ভেঙে ফেলার আবেদন করেন। কিন্তু সাজু তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা এখনো ভাঙেনি।

সাজুর এমন আচরণে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। সরকারি জায়গা দখল, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, দুই জায়গা থেকে সরকারি বেতন উত্তোলন, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, ইতিহাস বিকৃতি করে বই লেখাসহ নানা অভিযোগে আশুগঞ্জ এলাকায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এদিকে তার লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও আশুগঞ্জ’ বইয়ে আশুগঞ্জ উপজেলার নানা বিষয় নিয়ে অসংগতি থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলাও হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, সাজুর চাচা মোজাম্মেল হোসেন একজন চিহ্নিত রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি ক্যাম্পের সঙ্গে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন খবর পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছে দিতেন। মুক্তিযোদ্ধারাই রাজাকার মোজাম্মেল হোসেনকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। সাজু ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার রাজাকার চাচার নামে ব্রিজের নামফলক দিয়েছেন। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তামাশা। আর তার আপন ভাতিজা সাজু এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তার মতো লোক ক্ষমতায় আসলে দেশটাই রাজাকারদের হাতে চলে যাবে। এমন লোককে ক্ষমতায় দেখতে চান না তারা।

এ ব্যাপারে সাজু মুঠোফোনে সব কিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘সব বিষয়ে মীমাংসা হয়েছে। আমার চাচা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কিছু কিছু মহল আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ও নির্বাচনে ঘায়েল করার জন্য এমন কথা বলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর