ইনুর আসনে মনোনয়ন কিনলেন হানিফের ভাই

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 16:24:34

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের পর এবার তার বড় ভাই রশিদুল আলমও কুষ্টিয়া থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন কিনেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য এবং সাবেক আমলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য। আর কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) ও কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসন থেকে এবার মনোনয়ন কিনেছেন রশিদুল আলম।

কুষ্টিয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী আর কুষ্টিয়া-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তবে শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন না পেলে কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে নৌকা নিয়ে রশিদুল আলম লড়বেন বলে দলীয় সূত্র আভাস দিয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর–ভেড়ামারা) আসন থেকে হাসানুল হক ইনু দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রীও হয়েছেন। তবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জাসদের হাতে মিরপুর-ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হয়েছে। দুই উপজেলার নেতারা তাকে বয়কট করেছে। সম্প্রতি যৌথসভা করে দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা ইনুকে না দিয়ে আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেয়ার জোর দাবি জানান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে জাসদের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করেছে।

জাসদ নেতারা জানান, ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে হাসানুল হক ইনু একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। সেবার আওয়ামী লীগের নেতারা মনোনয়ন উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকে। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে এবার কিছু আওয়ামী লীগ নেতার কারণে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। তারা জামায়াত-বিএনপিকে ছাড় দিয়ে জাসদকে আক্রমণ করছে। তবে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা বিরোধিতা করলেও তৃণমূল থেকে ইনুকেই চাচ্ছে।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোট শরিক জাসদ সভাপতি ইনুকে চাপে রাখতে কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনেছেন রশিদুল আলম। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাও মনোনয়ন কিনেছেন।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, তারা কুষ্টিয়া-২ থেকে রশিদুল আলমকে প্রার্থী হিসেবে চাইবেন। শেষ পর্যন্ত যদি ইনুকে এ আসনে প্রার্থী করা হয়, তবে বিকল্প হিসেবে কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আতাহার আলী বলেন, ‘নেত্রী যাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে কাজ করবে দলের নেতাকর্মীরা। আমরা দলের প্রার্থী চাইতেই পারি। সেটা দল বিবেচনা করবে।’

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু দুই বার এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক কাজ করেছেন। দলমত নির্বিশেষে তার জনপ্রিয়তা আছে। এখানে বিরোধিতা করে লাভ নেই। যারা বিরোধিতা করছে তারায় শেষ পর্যন্ত ইনুর সঙ্গে মাঠে নামবে। আর মনোনয়ন যে কেউ তুলতে পারে। এটা নিয়ে আমরা বিচলিত নই।’

এদিকে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আফাজ উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত জয়ী হন রেজাউল হক চৌধুরী। এরপর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানে সাবেক ও বর্তমান দুই এমপি ছাড়াও প্রায় ১৬ জন নেতাকর্মী মনোনয়ন কিনেছেন। তারাও নির্বাচনে নৌকা প্রতীক চান। এখানে বর্তমান ও সাবেক এমপির কাউকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসা কঠিন হবে বলে মনে করেন সবাই। এর বাইরে আর যারা মনোনয়ন কিনেছেন তাদের এলাকায় তেমন কোনো জনসমর্থন নেই বললেই চলে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত। এসব নেতাদের একজন মনোনয়ন পেলে বাকিরা বেঁকে বসবে। তাই এমন কাউকে খোঁজা হচ্ছে যাকে মনোনয়ন দিলে সবাই তার পক্ষে মাঠে নামবে এবং জিতে আসা সহজ হবে। সেক্ষেত্রে রশিদুল আলমের বিকল্প কেউ নেই বলে মনে করছেন সবাই। তাকে মনোনয়ন দিলে সব বিরোধ মিটে যাবে। অবশ্য এর আগে মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-১ থেকে নির্বাচন করার জন্য মাঠে নামলে সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদের লোকজন হামলা করে। সে বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে এবার। তবে দলীয় নেত্রী সবাইকে নিয়ে বসে ঠিক করে দিলে কোনো ঝামেলা থাকবে না।

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন জানান, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ জন মনোনয়ন কিনেছেন। তিনি নিজেও কিনে জমা দিয়েছেন।

রশিদুল আলমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। দলের জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন। তাকে যদি নেত্রী মনোনয়ন দেয়, সবাই একজোট হয়ে মাঠে নামবে। এতে সন্দেহ নেই।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘মনোনয়নপত্র কিনছেন অনেকেই। নৌকা নিয়ে যে জয়লাভ করতে পারবে, এমন নেতারাই মনোনয়ন পাবেন বলে আমরা ধারণা করছি। আর বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করার সুযোগও কাউকে দেয়া হবে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর