খুলনা-৬: আ.লীগ-বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

বিবিধ, নির্বাচন

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 19:25:38

উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন। জাতীয় সংসদের ১০৪ নং আসন এটি। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষরা বিভিন্নভাবে বনের উপরে নির্ভরশীল।

ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত বয়ে বেড়ানো উপকূলীয় এ অঞ্চলটিতে অধিকাংশ জনসাধারণই দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এছাড়া অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা খুলনার এ অঞ্চলের মানুষ। কখনো শাকবাড়িয়া আবার কখনো কপোতাক্ষের ভাঙনে প্রতিনিয়তই চরম আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় গ্রামবাসী। বিশেষত কয়রা উপজেলার ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের দাবি রয়েছে বহুদিন ধরে। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও কার্যত দীর্ঘমেয়াদী কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি কেউই। এসব কারণেই সাধারণ মানুষের নির্বাচন ভাবনায় উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে যোগ্য প্রার্থীর বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বয়ে চলেছে দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় এ অঞ্চলটিতে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন নিয়মিত। সভা-সমাবেশে যোগ দেবার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন অনেকে।

সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় প্যানা, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে জানান দিচ্ছে নির্বাচন সমাগত। প্রার্থীদের আনাগোনা আর তৎপরতা এলাকায় এনে দিয়েছে নির্বাচনী আমেজ। এখন পর্যন্ত এ আসনে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বড় দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা না থাকলেও মূলত নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য এ প্রার্থীজট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে আগামী নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, নাকি জোট ছাড়াই হবে- তা নিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে রয়েছে নানামুখী আলোচনা।

খুলনা-৬ আসনের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এ আসনে বিগত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। যার অধিকাংশ সময়ই আসনটিতে জিতেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বর্তমানেও এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট ও তৃণমূলের প্রার্থী মিলিয়ে অনেকের আনাগোনা।

অপরদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের কোনো কার্যক্রম প্রকাশিত না হওয়ায় নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে বিএনপি। তবে তাদেরও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে বলে জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই। তাদের ভেতরে প্রথম সারিতে যারা এগিয়ে আছেন তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল।

অপরদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভেতরে যারা এগিয়ে আছেন তারা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা, কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মোমরেজুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আব্দুল মজিদ।

দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এ আসন থেকে নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি মহাজোটের মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় দুটি উপজেলায় নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

এছাড়া চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন জেলা সভাপতি মাওলানা গাজী নূর আহমেদ। তিনি নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আগে থেকেই এ দলের প্রার্থী ‘মহানগর জামায়াতের’ আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বিভিন্নভাবে তার প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন। ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তে এ আসনটি জামায়াতকে দেবার কথা শোনা যায়। জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস অসুস্থ রয়েছেন। তাই দলীয়ভাবে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী।


নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, খুলনা-৬ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫০ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮১ হাজার একশ ৭৩ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ২২৩ জন।

উল্লেখ্য, কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পাইকগাছা উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাড. স ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাড. শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মমিন উদ্দীন আহমেদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির অ্যাড. শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক, ২০০১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাড. মো. সোহরাব আলী সানা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক। টানা ২ বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এ আসনে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থনও বেড়েছে। তবে দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় আগামী নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখা দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি জোটগতভাবে হয় তাহলে জোট-মহাজোটের প্রার্থী যারা হবেন মূল লড়াই হবে তাদের মধ্যে। আর যদি জোটগত ভাবে নির্বাচন না হয় তাহলে কোন দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর