লক্ষ্মীপুর-২: বিএনপির ঘর দখলে নিতে চায় জামায়াত

বিবিধ, নির্বাচন

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 01:47:40

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। পরে উপ-নির্বাচন দিয়ে তিনি আসনটি ছেড়ে দিয়েছেন। ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনটি বিএনপির অনুকূলে রয়েছে। কিন্তু এবার বিএনপির ঘরকে নিজেদের দখলে নিতে চায় জামায়াত। জোটগতভাবে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়বে জামায়াত।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক চলছে। হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর না নেওয়ায় এখন আর বিএনপির সঙ্গী হতে চাচ্ছে না তারা। বর্তমানে নির্বাচনমুখী দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাই বিভক্ত।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে এককভাবে লড়তে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া। তিনি জেলা জামায়াতের আমির।

অন্যদিকে জামায়াত নেতা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪টি মামলা রয়েছে বলে সদর মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। পরে দু'বারই তিনি উপ-নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দেন। এতে ৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমেদকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের হারুনুর রশিদ জয়ী হন। ২০০১ সালে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারুনুর রশিদকে হারিয়ে বিএনপির আবুল খায়ের ভূঁইয়া জয়ী হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও দলের টিকিটে আবুল খায়ের ভূঁইয়া দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হন। সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটগত কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয়পার্টির মোহাম্মদ নোমান এমপি নির্বাচিত হন।

সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে শুক্রবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি হারুনুর রশিদ, খালেদা জিয়ার সাবেক প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) এম এ মজিদ, সদর উপজেলা (পশ্চিম) বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম হিরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া টিটু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মঞ্জুর এলাহী ও বিএনপি নেতা শাহেনা আক্তার নিলু। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে আবুল খায়ের ভূঁইয়ার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।

জামায়াত নেতাদের ভাষ্য মতে, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে এ আসনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়েছে। অনেকে কারাগারে ছিল। জেলা আমিরও ৩৮ দিন কারাগারে ছিল। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। একবারও সমবেদনা এবং কোনো বিবৃতি দেয়নি। এতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চরমভাবে ক্ষুদ্ধ। এছাড়া ভোটের জন্য বিএনপির জামায়াতকে প্রয়োজন হয়। এরপর তারা সব ভুলে যায়। তাদের ওপর ভর করে বিএনপিকে আর নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।

রায়পুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘এখানে বিএনপির ভোট ব্যাংক আছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও সংঘটিত। নির্বাচনের জন্য আমাদের একক সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। জোটগত ইস্যুতে জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।’

জেলা জামায়াতের আমির এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা একক ভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। বিএনপিকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। ৯১ সালের নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট আছে। তবে হামলা-মামলার সময় তারা আমাদের নেতাকর্মীদের জন্য নূন্যতম সমবেদনা জানায়নি।’

লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত রয়েছে। এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও যুক্ত হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা বসে আসন বণ্টন করবেন। ৯১ সাল থেকেই এটি আমাদের অনুকূলে রয়েছে। তাই লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর