ময়মনসিংহ-৩: বিএনপিতে ইকবাল-হিরণ দ্বন্দ্ব চরমে

বিবিধ, নির্বাচন

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 15:03:03

এক সময় জমিদারদের তীর্থ ভূমি বলা হত ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলাকে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৩ সংসদীয় আসন।

এ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমানের মৃত্যুতে ২০১৬ সালের উপনির্বাচনে জীবনের প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তানের সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তবে সংসদ সদস্য হয়ে উন্নয়নে তেমন চমক দেখাতে না পারায় এবং দলের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে না পারায় তাকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। আর এ কারণেই আসনটিতে নতুন মুখ চান নেতাকর্মীদের অনেকেই। আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর কোনো অভাব নেই। হালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পোড় খাওয়া সাবেক ছাত্রনেতারাও রয়েছেন মনোনয়ন লড়াইয়ে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অনু, জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সামীউল আলম লিটন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মতিউর রহমান, গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজনীন আলম, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এম এম মামুন।

ইতোমধ্যে সবাই আওয়ামী লীগের হয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে মনোনয়ন রাজনীতিতে সাড়া ফেলেছেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকজনের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তারা চান আমি প্রার্থী হই। তবে নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন তাকে বিজয়ী করতে বরাবরের মতোই মাঠে থাকব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এক সময়ের তুখোর ছাত্রনেতা শরীফ হাসান অনু গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও প্রায় ৫০ হাজার ভোট পান। এবার সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার আশায় রয়েছেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করবেন বলে প্রত্যাশা তার।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. সামীউল আলম লিটন নৌকার শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লড়াইয়ে বেশ আলোচনায় আছেন। ব্যাপক গণসংযোগ করে নিজের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের একটি বড় অংশ নিয়ে মাঠে তার শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক মোর্শেদুজ্জামান সেলিমও শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। এবার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার জন্য কাজ করতে চান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজনীন আলম দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে ভোটারদের মুখে মুখে আলোচনায় আছেন। ২০১৪ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পরে অবশ্য দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এবার নাজনীন আলম আশাবাদী তিনিই নৌকার মনোনয়ন পাবেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, এবার বিএনপি নির্বাচনে আসায় আসনটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে প্রার্থী বাছাইয়ের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। প্রার্থী বাছাই ভুল হলে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

অপরদিকে, গৌরীপুরে বিএনপিতে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। বর্ষীয়ান বিএনপি নেতা, দুইবারের সংসদ সদস্য প্রয়াত আইনজীবী এএফএম নজমুল হুদার মৃত্যুর পর গৌরীপুরে বিএনপির রাজনীতি আর কেউ জমিয়ে তুলতে পারেনি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসাইন ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত এই দুই নেতাকে ঘিরে।

২০১৪ সালে বিএনপির প্রার্থী হিরণ বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দলের বৃহৎ একটি অংশ নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে হিরণের প্রার্থিতা ঠেকাতে দলের বিরোধী নেতা-কর্মীরা ইকবালের বলয়ে ভিড়তে শুরু করায় মাঠের রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছ বলে অভিমত অনেকের।

আসনটিতে পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হক। দলীয় নেতাকর্মীদের বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি প্রতিটি কর্মসূচিতেই সোচ্চার থাকেন তিনি। তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে ইতিবাচক আলোচনা।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যোগ্য নেতৃত্ব পেলে এ আসনে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থার প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে।

২২৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮ জন। যেখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩২১ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর