নির্বাচনী জোটে ‘উইনেবল’ প্রার্থীর খোঁজে আ.লীগ

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 11:33:18

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা শেষ। ভোট ৩০ ডিসেম্বর। তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশে বইছে ভোটের হাওয়া। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টসহ নির্বাচনমুখী দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্ধারণে ব্যস্ত।

এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের মিত্ররা ইতোমধ্যেই নিজেদের মধ্যে দর-কষাকষি করছে। ভোটের ফলাফলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রার্থী নির্ধারণে সর্বোচ্চ সতর্ক আওয়ামী লীগ। জোটের প্রার্থীদের ‘আমলনামা’ বিশ্লেষণ করে তারপর চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে চান তারা।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটগত ও আসন সমঝোতা এই দুই প্রক্রিয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল জোটগতভাবে ভোট করবে, বেশির ভাগের প্রতীক হবে নৌকা। আর জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টসহ তাদের অন্য মিত্রদের সঙ্গে হবে আসন সমঝোতা, তারা চাইলে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করবে। আওয়ামী লীগ সাপোর্ট দেবে। যেকোনো সংসদীয় আসনে জয়ের জন্য ‘ইলেকটেবল’/ ‘সিলেক্টেবল’ ও ‘উইনেবল (জয়ী হতে পারেন এমন)’ প্রার্থী যদি জোটের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে তাকেই মনোনয়ন দিতে চান তারা। এতে আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থীদের কপাল পুড়লেও সেটা মেনে নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ভোটে জয়ের ক্ষেত্রে দারুণ চ্যালেঞ্জ অনুভব করছে ক্ষমতাসীরা। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না তারা।

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি জরিপের ফলাফল মূল্যায়ন করে প্রার্থী নির্ধারণ করছেন। ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জনের নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করে তাদেরকে ভোটের জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়েছে। ৬০ থেকে ৭০ জনের ওই তালিকায় অনেক আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী যেমন বাদ পড়েছেন তেমনি কপাল খুলছে অপেক্ষাকৃত তরুণদের।

সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছয়টি পৃথক জরিপ করিয়েছেন। এসব জরিপে আওয়ামী লীগ, ১৪-দলীয় জোট, মিত্র ও বিরোধী জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার কী অবস্থান, তা উঠে এসেছে। শরিক ও মিত্রদের ইতোমধ্যে নিজ নিজ দলের ‘উইনেবল’ প্রার্থী কারা, সেই তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। এই তালিকার সঙ্গে জরিপ মিলিয়ে তারপরই আসন ছাড় দেওয়া হবে।

জানা গেছে, নির্বাচনী শরিকদের কথা চিন্তা করে ৭০/৮০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে মিত্র জাতীয়পার্টির জন্য বেশি সংখ্যক আসন ছাড় দিতে রাজি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। যদিও সে সংখ্যাটি নিয়ে দেন-দরবার চলছে। শুধু তাই নয় জয়ী হয়ে আসার সামর্থ্য থাকলে ছোট দলের বড় নেতাকেও আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা আছে আওয়ামী লীগের।

তবে আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা শুরু করেনি। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ বা যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকৃত চাহিদা কী, তা বোঝার চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দুই একদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে নিজ দলের প্রার্থীতালিকা তৈরি করবে। এরপর জোটের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতায় বসবে।

এদিকে দ্রুত আসন বণ্টন চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শনিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রোববারের মধ্যে আওয়ামী লীগ তার ৩০০ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জোটের প্রার্থিতাও নিশ্চিত করা হবে। ম‌নোনয়ন চূড়ান্তের পর আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীর জন্য প্রয়োজ‌নে আসন ছে‌ড়ে দে‌বে। তবে সে প্রার্থীকে হতে হবে ‘উইনেবল’/ ইলেকটেবল।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর