নির্বাচনী এলাকা ফেলে ঢাকায় আ’লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা

বিবিধ, নির্বাচন

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:36:06

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জোট-মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজের নির্বাচনী এলাকা ফেলে ঢাকায় পড়ে রয়েছেন। ভোট চাওয়া ও পাওয়ার চেয়ে মনোনয়ন পাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তাই মনোনয়নের আশায় ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

মনোনয়নের জন্য খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছে আওয়ামী লীগ আর মনোনয়ন তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে বিএনপি’র। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ২২৫ প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি থেকে করেছেন ১০৯ জন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গত একমাস ধরে ঢাকায় রয়েছেন। যদিও তিনি প্রতি শুক্রবারে চট্টগ্রামের বাসায় থাকেন। কিন্তু তিনিও নিজ এলাকায় মিরসরাইতে থাকেন না। এ এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও কেউ নিজের এলাকায় থাকেন না।

ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও বিএনপির ১৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে। কিন্তু এ এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনিও থাকেন ঢাকায়। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে গোলাম আকবর খন্দকার অথবা প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাদ কাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তারাও কেউ এলাকায় থাকেন না।

হাটহাজারী আসনে এবারও মহাজোটের প্রার্থী হতে চান বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি থাকেন ঢাকায়। এখানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেন।

এ আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চান। এ আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্ম নাছির উদ্দীন, জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ সাত জন। কিন্তু বিএনপির কেউই এলাকায় নেই, ঢাকায় বসবাস করেন।

রাঙ্গুনিয়াতে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ এবার মনোয়নন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। এখানে প্রার্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আলম। বিএনপির দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও বিএনপির প্রয়াত নেতা সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ আট জন। এখানে বিএনপি থেকে সাকা পরিবারের কেউ মনোনয়ন পাবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বড় দুই দলের কেউ এলাকায় নেই।

চান্দগাঁও-বোয়ালখালী মহাজোটের প্রার্থী জাসদের (একাংশ) কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, মুজিবুর রহমান, মো. আবদুচ ছালামসহ ১৭ জন। সবাই ঢাকায় গেলেও কয়েক জন এলাকায় ফিরেছেন।

কোতোয়ালী-বাকলিয়া থেকে মহাজোটের প্রার্থী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ঢাকায় রয়েছেন। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৬ জন। বর্তমানে এলাকায় কেউ নেই।

চট্টগ্রাম-১০ ও ১১ দুই আসন থেকে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ এবং আবদুল্লাহ আল নোমান মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন। এ দুইজনও রয়েছেন ঢাকায়।

চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন প্রয়াত আকতারুজ্জান চৌধুরীর ছেলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনিও রয়েছেন ঢাকায়। বিএনপির সরওয়ার জাহান মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে, তিনিও এলাকায় নেই।

চন্দনাইশ-সাতকানিয়ায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ বীরবিক্রম মনোনয়ন চান। তিনিও বসবাস করেন ঢাকায়।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সিটি মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানসহ ১২ জন। মুজিবুর রহমান ছাড়া আর কেউ এলাকায় নেই।

এখানে জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী মনোনয় দৌঁড়ে এগিয়ে। কিন্তু তারা দুজন এলাকায় থাকলেও। তফসিলের পর থেকে রয়েছেন ঢাকায়।

এ ব্যাপারে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ নুরুল আলম চৌধুরী বার্তা২৪কে বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ঢাকায় পড়ে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এলাকায় থাকলেও মনোনয়ন পাওয়া যায়।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকায় পড়ে থাকলে এলাকায় ভোটারদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই প্রার্থীদের এলাকায় থাকা উচিত।’

মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বার্তা২৪কে বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়প্রত্যাশীরা ঢাকায় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিংয়ে আছেন। এছাড়া আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর