প্রথমবার নৌকার টিকিট পেলেন তারা

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 14:44:07

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। চূড়ান্ত মনোনয়নে যেমন বর্ষীয়ান ঝানু রাজনীতিবিদরা মনোনয়ন পেয়েছেন তেমনি তরুণরাও স্থান করে নিয়েছন।

১০ জাতীয় সংসদে ছিলেন না কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছে এমন দশ প্রার্থীর পরিচয় বার্তা২৪ এর পাঠকদের তুলে ধরা হল:

মাশরাফি বিন মুর্তজা (নড়াইল-)

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওডিআই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাশরাফির মনোনয়নকে অনেকটা চমক হিসেবেই তুলে ধরেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে মাশরাফি সম্পৃক্ত না থাকলেও তার মনোনয়নে দারুণ খুশি  নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের  মধ্যদিয়ে মাশরাফি অনেক আগে থেকেই এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (সাইফুজ্জামান শিখর)কে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আসাদুজ্জামানের চতুর্থ সন্তান সাইফুজ্জামান শিখর। মাগুরার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শিখর দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ করে গেছেন। অবশেষে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেতে সক্ষম হলেন। সাইফুজ্জামান শিখর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

শেখ সারহান নাসের তন্ময় (বাগেরহাট-)

সুদর্শন, হাস্যোজ্জ্বল, সুবক্তা হিসেবে অল্পদিনেই সবার দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়েছেন শেখ সারহান নাসের তন্ময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ হেলাল উদ্দীনের একমাত্র ছেলে তিনি।

সম্প্রতি কয়েকটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গিতে দেওয়া বক্তৃতা সবার নজর কেড়েছে। ৩২ বছর বয়সী তন্ময়কে বাগেরহাট-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

. আবদুস সোবহান গোলাপ ( মাদারীপুর-)

মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এই আসনে পূর্বের সংসদ সদস্য আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবার বাদ পড়েছেন। গোলাপ বরিশালের গৌরনদীর ভিক্টোরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭২-৭৩) ছিলেন। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য(৭৩-৭৪)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক(১৯৭৯-৮০)। মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৮-৮০)। মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি (১৯৮১-৮৩)। ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য (১৯৮১-৮৩)। শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (২০০৮)। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য (২০১২)। আওয়ামী লীগে দপ্তর সম্পাদক (২০১৩)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী (২০১৪-বর্তমান)। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক (২০১৬- বর্তমান)।

ইকবাল হোসেন অপু (শরীতপুর-)

শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। অপু ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গযুক্ত। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিভিন্ন ইতিবাচক কর্ম আর বিচক্ষণ নেতৃত্বগুণে ইতিমধ্যে পালং-জাজিরাবাসীর আস্থা ও ভালাবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। অপু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়ার সন্তান।

একেএম এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-)

এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা থেকে এখন সংসদ সদস্য হওয়ার পথে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। তিনি ১৯৬৫ সালে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার পাইকবাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবুল হাশেম মিয়া ও মাতা বেগম আশরাফুন্নেসা।

স্কুল জীবন থেকেই তার ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে নোয়াখালীর এএম উচ্চবিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় তিনি স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিপুল ভোটে ১৯৮৯ সালে তিনি জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও তার ছিলো সদর্প বিচরণ।  ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

একেএম এনামুল হক শামীম ২০০২ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অবজারভার মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রথমবারের মতো এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অধিবেশনে এনামুল হক শামীমকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। সাংগঠনিক দায়িত্ব পান।

ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম-)

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রথমবারের মত তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর পিতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবাদ পুরুষ। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নওফেল উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে এসে রাজনীতিতে যুক্ত হন। আওয়ামী লীগের ২০ তম সম্মেলনে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দৃঢ় নেতৃত্ব ও যোগ্যতা দিয়ে তিনি এবার নৌকার মনোনয়নও নিশ্চিত করেছেন।

নূর মোহাম্মদ (কিশোরগঞ্জ -)

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। তিনি একাধারে আমলা, কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অবসর জীবনে এসে তিনি রাজনীতিতে নতুন করে চমক দেখিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। বাদ পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। এদিকে মনোনয়নের আশায় নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ করে গেছেন।

আবদুল মোমেন (সিলেট-)

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিলেট-১ আসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এই আসনে যিনি জয়লাভ করেন সেই ব্যক্তির দলই সরকার গঠন করেন। স্বাধীনতার পর থেকে সমস্ত জাতীয় নির্বাচনে এই সমীকরণ মিলে আসছে। তাই এবার সিলেট-১ এ জয় ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধ, সাবেক কূটনীতিক ড. আব্দুল মোমেন। তিনি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর প্রেসিডেন্ট। আবদুল মোমেনের দলীয় কোন পদ-পদবী না থাকলেও তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের আপন ছোটভাই।

শাহীনা চৌধুরী (কক্সবাজার-)

কক্সবাজার-৪ আসনে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। এবার সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী। শাহীনা চৌধুরী উখিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। তার বাবা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ঠান্ডা মিয়া ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

তার চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। চাচী অর্থ্যাৎ হামিদুল হক চৌধুরীর স্ত্রী নিগার সুলতানা উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর