শেখ হাসিনার নির্দেশ, দূরত্ব ঘুচিয়ে সাদেক খানের পক্ষে মাঠে নানক!

বিবিধ, নির্বাচন

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-22 16:26:28

দলীয় মনোনয়ন পেতে দুই সপ্তাহ আগেও দু’জনের মধ্যে বৈরিতা ছিল তুঙ্গে। দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার দিনেও দু’জনের সর্মথকরা সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে দিনে দুপুরে।

এ সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত হলে ঢাকা-১৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাদেক খানের বৈরিতা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকাশ্যে আসে।

এই আসন টানা ১০ বছর সংসদ থাকায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে প্রচেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হয়।

এই আসন থেকে এবার নানককে না দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয় হয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানকে। 

কিন্তু দলে দুই নেতার মধ্যে বৈরিতা থাকলে প্রতিপক্ষ যাতে ফায়দা নিতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে দুইজনের মিটমাট করে দিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কঠোর নির্দেশনা দেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) সচিবালয়ের মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে কাদেরকে শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকতে পারবে না। নেতৃত্বে বিরোধ থাকলে ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়।ভোটররা দ্বিধাবিভক্ত থাকলে এর সুফল ভোগ করবে বিরোধী পক্ষ। তাই এখনই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে হবে।

শেখ হাসিনার নির্দেশের পর এদিন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর কবির নানক সাদেক খানকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। সেখানে নানক সব ভেদাভেদ ভুলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের হয়ে ভোটে নামার ঘোষণা দেন।

এসময় সাদেক খানের হাত উঁচিয়ে ধরে নৌকাকে বিজয়ী করতে সংকল্পবদ্ধ হন ২০০৮ ও ২০১৪ সালের এই আসন নির্বাচিত যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বর্তমান সংসদ সদস্য নানক। তিনি বলেন, আমি যে দিন থেকে এই এলাকায় নৌকা তুলে নিয়েছিলাম, সেই দিন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এবার নৌকা তুলে দিয়েছেন সাদেক খানের হাতে। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ দেশকে রক্ষার স্বার্থে নৌকার স্বার্থে আমাদের এক হতে হবে।’

এরপর দলীয় প্রতীককের পক্ষে কাজ করার ঘোষণার তাঁর আসনে প্রার্থী সাদেক খান স্যালুট জানান নানককে।

সাদেক খান ১৯৭৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে সাদেক খান অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বকনিষ্ঠ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি তৎকালীন ৪৭ নং ওয়ার্ড ও বর্তমান ৩৪ নং ওয়ার্ড থেকে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পেয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কাউন্সিলরের পুরস্কারও। ১৯৯৭ সালে সাদেক খান দু’বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে তিনি ৪৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাদেক খান।

আলোচিত ১/১১’র সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কারাবন্দি হলে তার মুক্তির দাবিতে জনতার মঞ্চের সংগঠক হিসেবে সাড়ে ৪ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন সাদেক খান।

মোহাম্মদপুর-আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে নানকের জায়গায় নৌকা প্রতীকে দলের টিকেট পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।

মঞ্চে নানকের আবেগঘন বক্তব্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সাদেক খান বলেন, ‘আমার বড় ভাই, যে বক্তব্য সবার সামনে দিয়েছেন, আমাকে বুকে তুলে নিয়েছেন এর জন্য আমি ওনাকে স্যালুট জানাই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর