নির্বাচনে বড় বাজেট চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 14:31:06

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এপিবিএনসহ বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় বাড়তি লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক খসড়া বাজেটে ৪শ' ১০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হলেও পুলিশ বাহিনী ৪২৪ কোটি ও আনসার বাহিনী ৪৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সার্বিক হিসাব অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চায়।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে ও পরে মোট সাতদিন দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রায় ৪২৪ কোটি টাকা দাবি করেছে পুলিশ বাহিনী। এ ছাড়া আনসার বাহিনী ৪৪৩ কোটি, বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৭০ কোটি, কোস্ট গার্ড ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। বৈঠকে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বৈঠকে বসবে কমিশন। সেখানে বাজেট চূড়ান্ত হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে পুলিশ চারদিন থাকলেও এবার সাত দিন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের সময়ে থাকবেন চারদিন, মোতায়েনের পূর্বে দুইদিন ও প্রত্যাগমনের জন্য একদিন এই মোট সাত দিন ধরে ৪২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে ১২০ কোটি টাকা ধরা হলেও, পরে এ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেড়শ কোটি টাকার কিছু বেশি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭জন মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে এসপি থেকে তদুর্ধ্ব কর্মকর্তা ৩৪৯ জন রয়েছেন। পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক নির্বাচনের আগে ও বাকি অর্ধেক অর্থ নির্বাচনের পরে দেওয়া হবে।

আর আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা এর দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ চায়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, ভোটের মাঠে তাদের ছয়দিন থাকতে হবে। তাদের যে ভাতার হার নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য তারা তার দ্বিগুণ অর্থ দাবি করছে। তাদের জন্য দুইশ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে রাখা হলেও তারা চাইছে ৪৪৩ কোটি টাকা। কমিশন তাদের ছয়দিনের টাকাই দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে তাদের জন্য বরাদ্দ দুইশ কোটি টাকাই থাকছে। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার সম্পূর্ণ অর্থই আগাম পরিশোধ করা হবে।

অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কমিশনের কাছে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। এর আগে কমিশনের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে তারা ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু আজকের বৈঠকে তা বেড়ে ৭০ কোটিতে উঠে আসে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ৩০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে তা বেড়ে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। তাদের জন্য বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আগাম পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা নির্বাচনের পর সমন্বয় করা হবে।

এ ছাড়া নির্বাচনে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখারীসহ উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মাঠে সাতদিন অবস্থান করবেন। এ বাহিনীর জন্য কমিশন ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আজকের বৈঠকে তারা কিছু দাবি-দাওয়া রেখেছে। তবে কমিশন তাদের অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে সম্মত নয় বলে জানা গেছে। তারাও নির্বাচনের পূর্বে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক এবং নির্বাচনের পরে বাকি অর্ধেক অর্থ পাবেন।

আর সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ বাড়বে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর বৈঠকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে। কমিশন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কতদিন মোতায়েন থাকবে সে বিষয়ের ওপর বরাদ্দ নির্ভর করবে।

এদিকে আজকের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭ কিছু বেশি। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে ১৮ হাজার ২০৮ কেন্দ্রে। বাকি নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী জয়ী হওয়া ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ফলে বাড়তি লোকবল প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু এবার ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা দিগুণের চেয়েও বেশি। ফলে দিগুণ জনবল প্রয়োজন। এ ছাড়া বিগত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভাতার পরিমাণ বেড়েছে। তাই বিগত সময়ের হিসেব অনুযায়ী বরাদ্দ দিলে সেটি বন্টনে সমস্যা হবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য ৫৭ কোটি ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪০ টাকা। পুলিশের জন্য ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৯ টাকা, বিজিবির জন্য ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৫ টাকা, আনসার বাহিনীর জন্য ৬৩ কোটি ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৩০২ টাকা বরাদ্দ ছিল।

এবারই প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রের পাহারায় নির্বাচনে নামানো হচ্ছে গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) তারা মাঠে থাকবেন দুই দিনের জন্য। ভোটের মাঠে দুই দিন দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাম পুলিশ। দুই দিনে তাদের জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাতা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কত বাজেট সেটা জানতে চেয়েছি। আমার এবার আনসার বাহিনীকে শতভাগ অগ্রীম বরাদ্দ দিবো। আর অন্যান্য বাহিনীকে বাজেটের ৫০ শতাংশ অগ্রীম বরাদ্দ দেওয়া হবে। বাকি টাকা পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। এবার গ্রাম পুলিশকেও নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।

তফসিল অনুসারে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১০ ডিসেম্বর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর